'আমি তো আর ওরে পাব না!'

গত বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে ছিলেন আবরার আহম্মেদ চৌধুরী। সেই আবরার প্রাণ হারালেন বাসচাপায়। ছবি: সংগৃহীত
গত বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে ছিলেন আবরার আহম্মেদ চৌধুরী। সেই আবরার প্রাণ হারালেন বাসচাপায়। ছবি: সংগৃহীত

আবরার আহম্মেদ চৌধুরী মঙ্গলবার সকালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন, তখন ঘুণাক্ষরেও মা ভাবতে পারেননি এই যাওয়াই ছেলের শেষ যাওয়া। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, তারপর বনানী কবরস্থান। আবরারের মা ফরিদা ফাতেমীর আহাজারি থামে না। তিনি বলে যান, ‘আমি তো আর ওরে পাব না!’

আবরারদের পারিবারিক বন্ধু তানবিরা খান তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কাল যখন ওর মায়ের কাছে গেলাম, তখন সে অবিরত কথা বলে যাচ্ছে। তার আবরারের কত কথা! কিন্তু সব কথার মাঝে একটু পর পর, একটি কথাই “আমি তো আর ওরে পাব না!” এই না পাবার আর্তি আমার মতো সব মায়েদের হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছিল। আহারে...কেমন করে বাঁচবে এই মা! ওপার দুনিয়ায় অনেক ভালো থাক তুই বাবা।’

আজ বুধবার কথা হচ্ছিল তানবিরা খানের সঙ্গে। আবরার আর তাঁর মেয়ে রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়েছেন সেই প্লে গ্রুপ থেকে। কাল আবরারদের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। যতক্ষণ ছিলেন সেখানে, ফরিদা ফাতেমীকে শুধু বিলাপ করতে দেখেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কোনো মা সন্তানকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকেন। ফরিদাও তেমন। আবরারকে স্কুলে-কোচিংয়ো আনা-নেওয়া করা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডা, সিনেমা দেখার মতো অনুষ্ঠানগুলো ছেলে এড়ালে খুশি হতেন। এড়াতে না পারলে সঙ্গে যেতেন। আবরার যে বড় হয়েও মায়ের হাতেই ভাত খায়, ওর শার্টের বোতামটাও যে প্রতিদিন মা-ই লাগিয়ে দিতেন, এ সব খবরই বন্ধুমহলে সবার জানা ছিল। ছেলে লজ্জা পেলেও মায়ের আদরটুকু উপভোগ করতেন বলেই জানতেন তাঁরা।

তানবিরা বলেন, ‘ও খুব শান্তশিষ্ট ছিল। লেখাপড়ায় ভালো ছিল। বড় বড় স্বপ্ন দেখত। বন্ধুদের বলত, তার স্বপ্ন পূরণ করবেই। বন্ধুরা সেটা দেখবে।’ আবরারের কোনো অন্যায়-অপরাধের কথা কেউ মনে করতে পারেন না। ফরিদা ফাতেমী বারবারই কাল বলছিলেন, ‘আমার ছেলেটার কোনো অপরাধ অন্যায় জমা হয়নি, তার আগেই আল্লাহ ওকে তুলে নিয়ে গেছে।’ 

আবরারের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্কুলের সব শিক্ষক বাসায় গিয়েছিলেন। স্নেহের ছাত্রের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁরাও অসহায় বোধ করছেন।

গত বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন আবরার। তাতে লেখা ‘হ্যালো হানি-বানি, চলো আইন মানি।’ আবরারের বন্ধু-স্বজনেরা বলছিলেন, আবরার ছিলেন এই ছবির মতোই স্বচ্ছ-সুন্দর।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) ক্লাস ছিল আবরারের। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। ক্লাসে যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নর্দ্দায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিইউপির বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাঁকে চাপা দেয়।