উৎসবের ভোটে ভোটারের আকাল: দক্ষিণ সুরমায় ৮.৬৩ শতাংশ, জৈন্তাপুরে ৯.৩৮ শতাংশ

অলংকরণ : তুলি
অলংকরণ : তুলি

ভোট মানেই উৎসব। তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে আগের দিনের সেই উৎসবের আমেজ আর নেই। উল্টো ভোটের মাঠে ভোটারের আকাল দেখা দিয়েছে চরমভাবে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৬৩ ও ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ হারে। ভোটারের এমন খরার চিত্র গত কয়েক দশকের স্থানীয় নির্বাচনে আর দেখা যায়নি।

অতীতে পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচনে সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হারে ভোট গৃহীত হয়ে থাকে। আর এসব নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়ে থাকে উৎসবের আমেজে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে। তার আগে ২০০৯ সালের নির্বাচনে পড়েছিল ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ হারে। 

কিন্তু পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ হারে। ১০ মার্চ এই ধাপে ভোট গ্রহণ হয় ৭৮টি উপজেলায়। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ১১৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গোলাগুলি ও প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি উপজেলার ভোটের হিসাব ইসিতে এসে পৌঁছেনি। বাকি ১১১টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়েছে ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। দুই ধাপ মিলিয়ে ১৮৯ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ।
১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের ভোটের দিন বিকেলে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণের হার প্রথম ধাপের চেয়ে বেশিই হবে। কিন্তু সচিবের অনুমান সঠিক হয়নি। ইসি সচিবালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এই ধারা অব্যাহত থাকলে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি আরও কমে যাবে।

প্রথম ধাপ
প্রথম ধাপের ৭৮টি উপজেলার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়—৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে মাত্র চারটি উপজেলায়। এগুলো হলো—পঞ্চগড়ের আটোয়ারি (৭১.১৬) ও তেঁতুলিয়া (৬২.৭৮), কুড়িগ্রামের রাজীবপুর (৬৫.৯২) এবং জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল (৬৭.২৩)।
স্থানীয় নির্বাচনে সচরাচর যা দেখা যায় না তা ঘটেছে সাতটি উপজেলায়। এসব উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশেরও কম। এর মধ্যে পঞ্চগড় সদরে ২০ দশমিক ৬৩, কুড়িগ্রাম সদরে ২৪ দশমিক ৯৪ ও উলিপুরে ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, নীলফামারীর ডিমলায় ২৪ দশমিক ৮৯, লালমনিরহাট সদরে ২৬ দশমিক ০৯, রাজশাহীর পুঠিয়ায় ২৬ দশমিক ৬৯ এবং বাগমারায় ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে ভোট পড়েছে।

দ্বিতীয় ধাপ
দ্বিতীয় ধাপে মোট ১৪টি উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশেরও কম। এর মধ্যে সবচেয়ে কম ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। এই জেলার জৈন্তাপুরে ভোট পড়েছে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ হারে। এর বাইরে গাইবান্ধা সদরে ২৪ দশমিক ৮৯; বগুড়া সদরে ১৩ দশমিক ১৩, সারিয়াকান্দিতে ২৮ দশমিক ৭৮, ধুনটে ২৭ দশমিক ৫৯ ও শাজাহানপুরে ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ; নওগাঁর মান্দায় ২৭ দশমিক ৫৭; পাবনার বেড়ায় ২৫ দশমিক ৯৭, ঈশ্বরদীতে ২৬ দশমিক ৬৩ ও সাঁথিয়ায় ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ; সিলেটের গোয়াইনঘাটে ১৬ দশমিক ৫৩ এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটে ভোটারদের এতটা অনাগ্রহ অতীতের কোনো উপজেলা নির্বাচনে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে মাত্র ১৭টি উপজেলায়। এগুলো হলো—ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে ৬৬ দশমিক ৫০, বালিয়াডাঙ্গিতে ৭১ দশমিক ৪১ ও রানীশংকৈলে ৬১ দশমিক ০২; রংপুরের তারাগঞ্জে ৬০ দশমিক ৯০; দিনাজপুরের বিরামপুরে ৬২ দশমিক ৭৪; বগুড়ার গাবতলীতে ৬৫ দশমিক ৩২; নওগাঁর সাপাহারে ৬৪ দশমিক ৭১ ও পোরশাতে ৬৭ দশমিক ৮৯ এবং সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ৬২ দশমিক ৯০ শতাংশ হারে ভোট পড়েছে।