বৃষ্টির পানি ধরে রাখছেন পারুলেরা

কপোতাক্ষ নদের তীরে সাইবাত্তি পশ্চিমপাড়া। খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে পাড়াটি। কয়েক বছর আগে উপকূলীয় এ জনপদের মানুষের সুপেয় পানির প্রধান উৎস ছিল এ অঞ্চলের নদ-নদী। তবে দিন দিন সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকে নদী ও খাল-বিলের মিঠা পানির আধার নষ্ট করে ফেলে।

২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার কারণে ভূগর্ভস্থ এবং ভূ-উপরিস্থিত উভয় পানিই লবণাক্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয় মানুষ চর্ম ও পেটের নানা রোগে ভোগা শুরু করে। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ চিংড়ি ঘের, পোলট্রি ফার্ম এবং মাছ ধরে জীবনযাপন করে। সুপেয় খাবার পানির ঘাটতি দেখা দেওয়ায় স্থানীয় মানুষ ভয়ানক কষ্টে পড়ে। পানি সংগ্রহের জন্য তাদের অনেক দূরে যেতে হয়।

পারুল বেগম এই কপোতাক্ষ তীরের সাইবাত্তি পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা। স্বামী সরাফ সানা এবং ১১ বছরের মেয়ে খুশীকে নিয়ে তাঁর সংসার। সম্প্রতি এই পরিবার বৃষ্টির পানি ধরে রাখার সুবিধা পেয়েছে। এইচএসবিসি এবং ওয়াটার এইড জলবায়ু সহিষ্ণু কর্মসূচির মাধ্যমে এই সুবিধা দিয়েছে তাদের। সিডর আর আইলার পর এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ এবং উপরিস্থিত সব উৎসের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। আরডব্লিউএইচএসের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ধরে রাখা হয়, যাতে এই পানি খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পোলট্রি ফার্মের প্রাণীর সুস্বাস্থ্যের জন্য এই পানি ব্যবহার করা যায়। এই পানি দিয়ে হতে পারে চিংড়ির চাষও। এখন পানির জন্য পারুলকে আর দূরে যেতে হয় না। এখন পরিবারের দেখাশোনার কাজটি তিনি সহজেই করতে পারেন। নিজেদের খেতেও সময় দিতে পারেন। আগে পারুলের মেয়েটিও দুই থেকে তিন মাইল দূরে পানি আনতে মায়ের সঙ্গে যেত। এ কারণে স্কুল কামাই যেত হরহামেশাই। দেরি হতো মাঝেমধ্যে। এখন ঠিক সময়েই স্কুলে যেতে পারে খুশী। এ পরিবারের স্বাস্থ্য এখন নিরাপদ, জীবনও হয়েছে সহজতর।