লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির 'পুনর্বাসন কেন্দ্র'

এমন লক্কড়ঝক্কড় গাড়িও চলে রাস্তায়! গতকাল সদরঘাট–গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কে। প্রথম আলো
এমন লক্কড়ঝক্কড় গাড়িও চলে রাস্তায়! গতকাল সদরঘাট–গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কে। প্রথম আলো

কোনো বাসের রং উঠে গেছে, কোনোটির জানালার কাচ ভাঙা, কোনোটির হেডলাইট নেই, কোনোটির পেছনে নেই দিকনির্দেশক বাতি। কিন্তু এসব বাস চলছে অবাধে। এমনকি চলাচল করে দেড় যুগ আগে রাজধানীতে নিষিদ্ধ টু–স্ট্রোক অটোরিকশাও। এমন লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের দেখা মিলবে রাজধানীর গাবতলী–সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কে।

সড়কের আশপাশের বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশের সামনেই চলছে এসব জরাজীর্ণ যানবাহন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলছে সড়ক দিয়ে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি ঢাকা শহরের অংশ।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের অভিযানের মধ্যে রাজধানীর একটি সড়কে এমন যানবাহন চলাচল করায় অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন এই সড়কে চলাচলকারীরা। রাকিব হোসেন নামের একজন বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে পুরান ঢাকায় যাওয়ার সুন্দর একটি রাস্তা বেড়িবাঁধ। এই সড়কে যে বাসগুলো চলে, তার কোনোটিরই ফিটনেস আছে বলে মনে হয় না। লেগুনাগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ঢাকার বিভিন্ন সড়কে চলা মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির পুনর্বাসনকেন্দ্র এই সড়ক।

গাবতলী থেকে বাবুবাজার রুটে চলে বিভিন্ন পরিবহনের বাস। গতকাল প্রায় দুই ঘণ্টা সড়কের একটি স্থানে দাঁড়িয়ে অন্তত ২০টি বাস চলতে দেখা যায়। কিন্তু খারাপের দিক থেকে একেকটি বাসকে মনে হয় আরেকটির চেয়ে এগিয়ে। বাসের পাশাপাশি গতকাল এই সড়কে দুটি টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশাও চলতে দেখা গেছে। এমন অটোরিকশা ২০০১ সালে ঢাকা শহরে নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।

লক্কড়ঝক্কড় বাসে চলাচল করেন এমন এক যাত্রী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তিনি ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত বাবুবাজারে যান। এই সড়কে চলা সব বাসই প্রায় একই রকম। ভাড়াও কম নয়। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে এমন বাসে উঠতে হয়। মাঝেমধ্যে বাসের চালকের আসনে থাকে কিশোর, যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার কথা না। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

গতকাল সড়কে যখন এমন লক্কড়ঝক্কড় বাস যখন চলছিল, তখন সেকশন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনজন। তাঁদের একজন সার্জেন্ট শেখ ইমরান হোসাইনের কাছে লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখতে লক্কড়ঝক্কড় মনে হলেও অধিকাংশ বাসেরই ফিটনেস সনদ আছে। তাই চাইলেও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি মূল শহরের বাইরের একটি সড়ক। তাই এমন যানবাহন চলতে দেওয়া হয়।

গাবতলী থেকে বাবুবাজার সড়কটির একাংশ পড়েছে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ বিভাগে। যোগাযোগ করা হলে দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার এস এম মুরাদ আলী বলেন, এমন লক্কড়ঝক্কড় বাস তিনি খুঁজছেন। তাঁর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ওই রাস্তায় লক্কড়ঝক্কড় বাস চলে না। শিগগিরই ওই রাস্তায় অভিযান চালানো হবে।