রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে আপত্তি নেই জাতিসংঘের

ভলকার টার্ক
ভলকার টার্ক

কক্সবাজারের শিবির থেকে সরিয়ে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তরে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া উদ্যোগকে এই প্রথম স্বাগত জানাল জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তবে সংস্থাটি বলছে, জোর করে রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো যাবে না। স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে চাইলে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় আপত্তি থাকবে না জাতিসংঘের।

কক্সবাজারের শিবির পরিদর্শন শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সুরক্ষাবিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার ভলকার টার্ক। শুরু থেকে জাতিসংঘ ভাসানচরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এলেও এখন কেন অবস্থান পাল্টাল, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বলেননি তিনি।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে ইউএনএইচসিআরের এই কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজারের শিবিরে এখন গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। সে কারণে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পুনর্বাসনে বাংলাদেশের নেওয়া সিদ্ধান্তকে ইউএনএইচসিআর স্বাগত জানায়। তবে যেকোনো পুনর্বাসন–প্রক্রিয়া স্বেচ্ছায় হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।

২০১৮ সালের অক্টোবরের পর দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ভলকার টার্ক বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাস করত। তারা সেখানকার অধিবাসী। কাজেই তাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে অব্যাহতভাবে আলোচনা চলতে থাকবে। স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে এই আলোচনা চলবে।

রাখাইনে জাতিসংঘের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভলকার বলেন, এখন পর্যন্ত সেখানকার ৬০টি গ্রামে জাতিসংঘের উপস্থিতি আছে। তবে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশের স্বার্থে রাখাইনের সব গ্রামেই জাতিসংঘসহ মানবিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের অবারিত উপস্থিতি জরুরি। তিনি জানান, মিয়ানমারে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার দপ্তর রয়েছে। তিনি নিজেও সেখানে কয়েকবার গেছেন। তবে রাখাইন পরিস্থিতি জটিল।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি কবে রাখাইনের ৬০ গ্রামে গিয়েছিলেন আর এখন সেখানে তাঁদের উপস্থিতি আছে কি না? জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআরের এই কর্মকর্তা বলেন, গত বছর তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন। তবে কয়েক মাস ধরে উত্তর রাখাইনে জাতিসংঘের কোনো উপস্থিতি নেই।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে দেওয়া বক্তৃতায় ভলকার টার্ক বলেন, তারা (রোহিঙ্গারা) এখানে অর্থবহ আর কর্মক্ষম জীবন কাটাতে আগ্রহী। তারা ফিরে যাওয়ার বিষয়টি ভাবছে। কাজেই তাদের সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব।

রোহিঙ্গাদের এখানে অর্থবহ জীবন কাটানোর আগ্রহের কথা বলে ইউএনএইচসিআর কি বাংলাদেশ সরকারকে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির কথা বলছে? এ নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআরের এ-দেশীয় পরিচালক স্টিভেন করলেস বলেন, তিনি (ভলকার টার্ক) বাংলাদেশের প্রসঙ্গে বলেননি।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের স্বার্থে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে ভলকার টার্ক বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।