বর্তমান ফ্যাসিবাদ বিদায়ে বিপ্লব করতে হবে

অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো
অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে দেশে পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়েছে। এটা বিদায় করতে হলে বিপ্লব করতে হবে। বিপ্লব করতে হলে সুশৃঙ্খল সংগঠনের প্রয়োজন হয়। আর সংগঠনের জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন।

আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ কথা বলেন। ‘উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ: জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও বামপন্থীদের ভূমিকা’ শিরোনামে আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয়।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পূর্ববঙ্গ স্বাধীন হবে, সেটি স্পষ্ট হয়েছিল ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, কারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে? সমাজের সব শ্রেণি এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র সবাই এই আন্দোলনে নেমেছিল। ছাত্ররাই এই আন্দোলনের চালিকাশক্তি ছিল। তিনি বলেন, ‘উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে দাবি উঠেছিল, ২১ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিন ঘোষণা করতে হবে। পরে ১৯৭০ সাল থেকে মধ্যরাতে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন শুরু হয়ে গেল। তখন থেকে বোঝা গেল আমরা পুঁজিবাদী ধারায় চলে গেলাম। থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো ২১ ফেব্রুয়ারিও অনুকরণ হতে থাকল। যার ফলে নিরাপত্তার নামে শহীদ মিনারে জনগণের যাওয়া নিয়ন্ত্রিত হলো।’

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, আইয়ুব খানের প্রধান অস্ত্র ছিল উন্নয়নের দশক। এই উন্নয়নের দশক দিয়ে জনগণের কষ্ট, দুর্দশা সব আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এ বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের “কারাগারের রোজনামচায়” বলা আছে, “উন্নয়নের দশক চলছে, কিন্তু মানুষের নিপীড়ন, কষ্ট এসবের কোনো উল্লেখ নেই।” এ সময় আনু মুহাম্মদ বলেন, মনে হয় যেন ২০১৭-১৮ সালে লেখা কথা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আলোচনা করাটা এখনো প্রাসঙ্গিক। কারণ এখনো মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু থেকে এখনো শেখার আছে। তিনি বলেন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ছয় দফার ভিত্তিতে হয়নি, ১১ দফার ভিত্তিতে হয়েছিল। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের যে পরিমাণে ইতিহাস চর্চা করা উচিত, সে পরিমাণে করে না। সবার লেখা, মত পড়া উচিত। তারপর স্বাধীনভাবে বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করা উচিত।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, আগামী দিনে গণ–অভ্যুত্থানের মূল শক্তি কে? একটি পর্যায়ে গিয়ে পুঁজিবাদ একটি সংকটে পড়বে, তখন তাদের আঘাত করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত চারটি সংকটে পড়েছে। ১৯৭৫ সালের সংকটে শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। এরপর ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় সংকটে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। তৃতীয় সংকট আসে ২০০৬ সালে। পরবর্তীতে যেটির সমাধান হয় এক-এগারোর মধ্য দিয়ে। আর ২০১৪ সালে আসে চতুর্থ সংকট, যা এখনো চলছে। সে জন্য বামপন্থীদের একতাবদ্ধ হতে হবে যেন পঞ্চম, ষষ্ঠ সংকট না আসে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাসদের (মার্ক্সবাদী) মবিনুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা আবদুল্লাহ আল ক্বাফী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।