খুনিকে ধরতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তানহারা বাবার খোলা চিঠি

নিহত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
নিহত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
>

• ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যা
• দেড় বছরেও খুনের নির্দেশদাতা ‘বড় ভাই’ শনাক্ত করা যায়নি
• পিবিআইয়ের তদন্তেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই

ছেলের খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নির্দেশদাতা ‘বড় ভাই’ এখনো অধরা। তদন্তেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এই অবস্থায় সেই বড় ভাইকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচার চেয়েছেন সন্তানহারা বাবা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই চিঠি লেখেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে এটি আপলোড করা হয়।

সদরঘাট থানা-পুলিশ তদন্তে ধীরগতিতে চলায়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত তিন মাস আগে। বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে মামলাটি।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে নগরের সদরঘাট থানার নালাপাড়ার বাসায় হানা দিয়ে সুদীপ্তকে ঘুম থেকে তুলে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে কয়েকজন সন্ত্রাসী বেদম পেটায়। হাসপাতালে নেওয়া হলে সুদীপ্তকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনায় তাঁর বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি সদরঘাট থানার পুলিশ তদন্ত করে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শুরু করে।


সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় বড় ভাইসহ ১৫ থেকে ১৬ জনের নাম এসেছে। ভিডিওতে ধারণ করা পেটানোর দৃশ্যে নওশাদ সাদা শার্ট, ফয়সল নীল গেঞ্জি, শিপন নীল-সাদা গেঞ্জি পরিহিত ছিলেন। ১৬৪ ধারায় নওশাদ ও শিপনের নাম আসেনি। ভিডিওটি মোক্তারের আইফোন থেকে পুলিশ সংগ্রহ করেছে। অথচ ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে মোক্তার নওশাদ ও শিপনের নাম গোপন রেখেছিলেন। আর পাপ্পুর জবানবন্দিতে বড় ভাই প্রসঙ্গটি আসে। কিন্তু বড় ভাইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা সুদীপ্তের বাবা খোলা চিঠিতে লেখেন, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, হত্যাকাণ্ডের ভিডিও থাকা সত্ত্বেও খুনের নির্দেশদাতা লালখান বাজারের সেই বড় ভাই আইনের আওতায় আসেননি। দেড় বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় সন্তানহারা বাবা বিচার বঞ্চিত হয়েছি। জে৵ষ্ঠ পুত্র হিসেবে পরিবারের আশা–ভরসার প্রতীক ছিল সুদীপ্ত। তাকে হারিয়ে সবাই আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ন্যায়বিচার ছাড়া সরকারের কাছে চাওয়া–পাওয়ার কিছুই নেই।’

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মেঘনাথ বিশ্বাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেড় বছর পার হলেও খুনের নির্দেশদাতাসহ আসামিরা বীরদর্পে ঘুরছে। মরার আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান তিনি।

সূত্র জানায়, লালখান বাজার এলাকার সেই বড় ভাই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে একটি পক্ষের সমর্থনে রয়েছেন সেই বড় ভাই।

সুদীপ্ত হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে আইনুল কাদের নিপু ও মো. জাহেদকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তা নামঞ্জুর হয়। এরপরও থেমে নেই তদন্ত।