সাইনবোর্ডই সার, বাস দাঁড়ায় না

জায়গাটি বাসস্টপেজ হিসেবে নির্ধারণ করেছে পুলিশ। কিন্তু সেখানে চলছে মাছ বিক্রি। বাস দাঁড়াচ্ছে স্টপেজের সামনের মোড়ে। গতকাল সাতমসজিদ রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
জায়গাটি বাসস্টপেজ হিসেবে নির্ধারণ করেছে পুলিশ। কিন্তু সেখানে চলছে মাছ বিক্রি। বাস দাঁড়াচ্ছে স্টপেজের সামনের মোড়ে। গতকাল সাতমসজিদ রোডে। ছবি: প্রথম আলো

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর নড়েচড়ে বসেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বিভিন্ন সড়কে ১২১টি বাসস্টপেজের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তখন। স্টপেজ শুরু ও শেষে লাগানো হলো বড় বড় সাইনবোর্ড। পুলিশ কমিশনার ঘোষণা করলেন, ‘স্টপেজ ছাড়া বাস দাঁড়াবে না।’ কিন্তু বাস্তবে শুধু সাইনবোর্ডই আছে, ঘোষণাটি আর কার্যকর হয়নি।
গতকাল শনিবার মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ ও ফার্মগেট এলাকার অন্তত ১০টি বাসস্টপেজ ঘুরে দেখা গেছে, কোনো স্টপেজেই বাস থামে না। আগের মতোই বিশৃঙ্খলভাবে থামিয়েই বাসে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। স্টপেজে বাস থামানোর জন্য পুলিশের কোনো কার্যক্রমও নেই।
স্টপেজে বাস না থামার পেছনে বাসচালকেরা যাত্রীর ওপর, যাত্রীরা চালকের ওপর আর পুলিশ অনভ্যস্ততার ওপর দায় চাপিয়েছেন। চালকেরা বলছেন, যাত্রীরা নির্ধারিত জায়গা দাঁড়ান না। তাঁরা নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় উঠতে-নামতে চান। আর যাত্রীদের ভাষ্য, চালকেরাই নির্ধারিত স্টপেজে থামতে চান না।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক এবং বুয়েটের অধ্যাপক বলেন, স্টপেজে বাস না থামার মূল কারণ চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এর সমস্যার সমাধান না করে স্টপেজ বানানোর কারণেই এমন হয়েছে। এটি কার্যকর করতে হলে ২৪ ঘণ্টা পুলিশকে পাহারা দিতে হবে। যাত্রী ও বাসচালককে স্টপেজে আসতে বাধ্য করতে হবে।
গতকাল সকালে সাতমসজিদ রোডটি ঘুরে দেখা গেছে, জিগাতলা মোড় থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্ত আসার পথে তিনটি বাস স্টপেজ বানিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু তিনটি স্টপেজেই বাস দাঁড়ানোর বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। ধানমন্ডি ৩/এ–তে এএমএম কনভেনশন সেন্টারের সামনে একটি স্টপেজ বানানো হয়েছে। তা এখন মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জায়গায় রূপ নিয়েছে। স্টপেজটির আশপাশের ভবনগুলোতে যাঁরা মোটরসাইকেল চালিয়ে আসেন, তাঁরা এখানে পার্ক করেন। অথচ স্টপেজ যেখানে শেষ হয়েছে, এর কয়েক হাত সামনে থেকেই শুরু হয়েছে ‘অন স্ট্রিট পার্কিং’। পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে কেউ মোটরসাইকেল রাখছেন না।
ধানমন্ডি ৮/এ বাসস্টপেজটির অবস্থাও একই রকম। সেখানে স্টপেজের জায়গায় জায়গায়, গাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখা। আছে অস্থায়ী দোকানও। আর ধানমন্ডি শংকরের পাশের বাসস্টপেজটিতে গিয়ে দেখা গেছে, স্টপেজের জায়গায় একটি ট্রাক। ট্রাকে করে মাছ বিক্রি করছে ‘বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন’। ট্রাকটির সামনে ভাসমান দোকান। এ সময় মিডওয়েসহ দুটি বাস স্টপেজটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কোনো বাসই স্টপেজে দাঁড়ায়নি। দাঁড়াল একটু সামনে মোড়ের কাছে।
মিডওয়ে পরিবহনের বাসটির চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাঁড়ানোর জায়গা কই, আর যাত্রীরাই তো দাঁড়ায় না। বাস থামায়ে লাভ কী।’ স্টপেজ থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের যাত্রী আবদুর রহমান বলেন, বাস যদি স্টপেজ ছাড়া না দাঁড়ায়, তখন যাত্রীদের আর উপায় থাকবে না। তাই সবার আগে স্টপেজে বাস দাঁড়ানো নিশ্চিত করতে হবে। তিনটি স্টপেজেই নির্ধারিত স্থানে বাস দাঁড়ানো নিশ্চিত করতে পুলিশের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে এই সড়কে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বললে নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, মূলত যাত্রী ও চালকদের অনভ্যস্ততার কারণে এমন হচ্ছে। অভ্যস্ত করতে সময় লাগবে।
এই তিন স্টপেজ ছাড়াও মিরপুর রোডে নিউমার্কেটের সামনের বাসস্টপেজে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে একই জায়গা বাসস্টপেজ ও পার্কিং হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। পার্কিংয়ের জন্য জায়গাটি ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। সেখানে মোটরসাইকেলপ্রতি ২০ টাকা করে নেন ইজারাদারের প্রতিনিধি।
ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘বাসস্টপেজ কার্যকর করতে পারলে পথচারী ও বাস পরিচালনায় শৃঙ্খলা আসবে। এর সঙ্গে যাত্রী, বাস মালিক ও পুলিশ জড়িত। আমরা তিন পক্ষের মাধ্যমে বাসস্টপেজ কার্যকর করতে কাজ করছি।’