সংগ্রামী জীবনে ফাগুয়ার ছোঁয়া

একে অন্যের গায়ে রঙ দিয়ে আনন্দে মাতায়ারা শিশুরা। গতকাল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগানে।  ছবি: প্রথম আলো
একে অন্যের গায়ে রঙ দিয়ে আনন্দে মাতায়ারা শিশুরা। গতকাল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগানে। ছবি: প্রথম আলো

সংগ্রামী জীবন চা-শ্রমিকদের। ঘরে-বাইরে শত অভাব-অনটন। তবে বছরের কয়েকটা সময়ে তাঁরা এসব ভুলে যান। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। এ রকম উপলক্ষগুলোর একটি হোলি উৎসব। যা চা-বাগানে ফাগুয়া উৎসব নামেই বেশি পরিচিত।
এখন ফাগুয়া উৎসবের হাওয়া বইছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার চা-বাগানগুলোয়। একে অন্যের মুখে বাঁ হাতে রং লাগিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে চলছে ফাগুয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়। লাল, কালো, নীল রঙের ছড়াছড়িতে চা জনগোষ্ঠীর সবাই এখন মাতোয়ারা। গত শুক্র ও শনিবার উপজেলার ভাড়াউড়া, ফুলছড়া, কালীঘাট, রাজঘাটসহ বিভিন্ন চা–বাগান ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চা–বাগানের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ফাগুয়ারা। সবার হাতে কিংবা মুখে লাগানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রং। যাঁদের মুখে রং নেই, তাঁদের রং দিয়ে রাঙিয়ে তুলতেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ অন্যজনের। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী—সবাই নেচে গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন। চা-বাগানগুলোতে শুরু হয়েছে লাঠিনাচ। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও ফাগুয়া উৎসবের তিন দিন চা জনগোষ্ঠীর লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করে। সব মিলিয়ে প্রায় প্রতিটি চা-বাগানেই এক অন্যরকম আবহ বিরাজ করছে। উৎসবকে আরও আনন্দঘন করতে চা-বাগানগুলোতে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। চা-শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে উৎসব ভাতাও।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, চা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে হোলি অন্যতম। সর্বজনীনভাবে একে দোল উৎসব বা হোলি বলা হলেও চা-বাগানে এটি ফাগুয়া উৎসব নামেই অধিক পরিচিত। চা-শ্রমিকদের সংগ্রামী জীবনে প্রতিবছর ফাগুয়া উৎসব আনন্দের জোয়ার নিয়ে আসে। ফাগুয়া শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েরা বাপের বাড়ি নাইওরে আসেন। চা-বাগানের ঘরে ঘরে ভালো রান্নাবান্না হয়। অনেক আনন্দ হয়। চা-শ্রমিকেরা সারা বছর বিভিন্ন সমস্যায় ভুগলেও উৎসবের দিনগুলোতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু ভালো থাকার চেষ্টা করেন।