তৃতীয় ধাপেও ভোটার কম, বর্জন-সংঘর্ষ-কারচুপি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোট নেওয়া হয়েছে। সদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, মিরপুর, কুষ্টিয়া, ২৪ মার্চ। ছবি: তৌহিদী হাসান
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোট নেওয়া হয়েছে। সদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, মিরপুর, কুষ্টিয়া, ২৪ মার্চ। ছবি: তৌহিদী হাসান

আগের দুই ধাপের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আজ রোববার হওয়া তৃতীয় ধাপেও ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম। তবে এর মধ্যেও সংঘর্ষ, ভোট বর্জন, আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। আর এসব কারণে ঘটেছে ভোট স্থগিতের ঘটনাও।

আজ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি হয়েছে, আহত হয়েছেন ভোটাররা। আবার চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ভোট জালিয়াতি রুখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল। আগের রাতে ব্যালট ভরিয়ে ফেলার অভিযোগে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। ভোট জালিয়াতিতে যুক্ত থাকার দায়ে জেলার একজন এএসপি এবং ওসিকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক জায়গায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন।

আজ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়। বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী দল এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় এমনিতেই এর জৌলুশ কমে যায়। আগের দুই ধাপে দেখা গেছে, ভোটার উপস্থিতি বেশ কম। এবারের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট পড়ে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ হারে। ১০ মার্চ এই ধাপে ভোট গ্রহণ হয় ৭৮টি উপজেলায়। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ১১৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গোলাগুলি ও প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি উপজেলার ভোটের হিসাব ইসিতে এসে পৌঁছেনি। বাকি ১১১টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়েছে ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। দুই ধাপ মিলিয়ে ১৮৯ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ।

আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা যায়। বরিশাল থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সকাল ১০টার দিকে উজিরপুর উপজেলার সরকারি ডব্লিউবি ইউনিয়ন মডেল ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বুথগুলোতে কোনো ভোটার নেই। মাঝে-মধ্যে দু-একজন ভোটার আসছেন এবং ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জয়ন্ত হালদার বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৬৭৫। সকাল ৮টা থেকে ১০টা ১০ মিনিট পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটে এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৪৩টি।

কিশোরগঞ্জের একাধিক উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ঘুরে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা দেখেছেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটারের খরা।

তবে এ অবস্থার মধ্যেও সংঘর্ষ থেমে থাকেনি। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে জোর করে ভোট দিতে যান একদল লোক। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দ্রুত পুলিশের সহায়তা চাইলে সেখানে পুলিশের সদস্যরা যাওয়ামাত্র দুর্বৃত্তরা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। সেখানে এক কনস্টেবল আহত হন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে।

কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে তিনজন আহত হন। বিবদমান দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে গুলিবর্ষণের অভিযোগ এনেছে।

এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগে পুরো উপজেলার ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান বলেছেন, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শফিকুল ইসলাম ও কটিয়াদী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিনকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কটিয়াদী উপজেলায় রাতের বেলায় ব্যালট বাক্স ভরার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনা তদন্তের জন্য জন্য তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে মানিকগঞ্জে দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুজ্জামান জন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্র দখল করছেন—এমন অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন।