'বড় ভাই'-এর হদিস এক বছরেও মেলেনি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নিজেদের কাছে সবসময় থাকত ছুরি। তবে কোথাও গেলে এক ‘বড় ভাই’–এর কাছ থেকে নিয়ে যেত অস্ত্র ও গুলি। এরা কোনো সন্ত্রাসী নয়। স্কুলপড়ুয়া কিশোর। সেই অস্ত্র দিয়ে পুলিশকেও গুলি করতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু অস্ত্র সরবরাহকারী সেই বড় ভাইয়ের হদিস এক বছরেও পায়নি পুলিশ। তাঁর নাম ওমর ফারুক। ঠিকানা সংগ্রহ করতে না পারায় আরও তিন আসামির নাম বাদ দেওয়া হয় অভিযোগপত্রে।

২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় তল্লাশিচৌকি বসিয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। ওই সময় তিনটি মোটরসাইকেলযোগে ছয় কিশোর যাওয়ার সময় পুলিশ থামার সংকেত দেয়। তখনই পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। প্রকাশ্যে রাস্তায় অতর্কিতে গুলিতে আহত হন নগরের পাঁচলাইশ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল মালেক। তিনি হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হন। পালানোর সময় পুলিশ আবদুল হাকিম নামের একজনকে ধরে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলির খোসা ও একটি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

শুরুতে মামলাটি তদন্ত করেন পাঁচলাইশ থানার এসআই পলাশ চন্দ্র। তিনি অসুস্থ থাকায় এসআই আবু তালেব তদন্ত করেন। ঘটনার পরপর পুলিশ চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থেকে স্কুলপড়ুয়া দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। তারা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে বলে, স্কুলপড়ুয়া তাদের এক বন্ধুকে স্কুলপড়ুয়া আরেক কিশোর মারধর করে। বিষয়টি জানার পর তারা ওই কিশোরের কাছে কৈফিয়ত চায়। এতে কিশোরটি ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে গালাগাল করে। এই কারণে তাদের পূর্বপরিচিত বড় ভাই ফারুকের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। আগে থেকে ছিল ছুরি। নগরের নিউমার্কেট থেকে ৩০০ টাকায় ছুরিগুলো কেনে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে আগেও অস্ত্রটি নিয়ে কীভাবে গুলি করতে হয় শিখেছিল। দুই নম্বর গেটে আড্ডা দিতে গিয়ে সেই বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়।

তদন্ত শেষে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ বড় ভাইয়ের সহযোগী খোকন চৌধুরী, মো. সবুজ, আবদুল হাকিম, আইমান জিয়াদ ও পলাতক ওমর ফারুককে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। কিশোর হওয়ায় আরও তিনজনের বিরুদ্ধে পৃথক দোষীপত্র দেওয়া হয়। আসামিদের মধে৵ খোকন চৌধুরী কারাগারে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন ওমর ফারুক। বাকিরা সবাই জামিনে।

মামলার এজাহারে আরও তিন কিশোরের নাম থাকলেও ঠিকানা সংগ্রহ করতে না পারায় মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় অভিযোগপত্রে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার এসআই আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি পরে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু অস্ত্র সরবরাহকারী বড় ভাইকে অনেক চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাঁকে ধরতে পারলে অস্ত্র–গুলির উৎস জানা যেত।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, কিশোরেরা কোথায় যায়, কী করে মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। সঙ্গদোষের কারণে অভিজাত পরিবারের অনেক কিশোর বিপথগামী হচ্ছে। পুলিশের একার পক্ষে এ ধরনের অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়। অস্ত্র সরবরাহকারী সেই বড় ভাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।