পার্ক-মাঠের যুগলযাত্রা

পাখির চোখে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড পার্ক ও মাঠ।  ছবি: প্রথম আলো
পাখির চোখে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড পার্ক ও মাঠ। ছবি: প্রথম আলো

মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডের সি ব্লকে পার্ক আর মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল নিরেট দেয়াল। দুই পাশে ভিন্ন পরিবেশ—পার্কের অংশ বেশ সবুজ, আর মাঠে ধুলার রাজত্ব। তবে নতুন নকশায় মাঠ ও পার্ক ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় মাঝখানের দেয়ালটি উঠিয়ে দেয় নকশাকারী প্রতিষ্ঠান। ফলে দীর্ঘকাল পাশাপাশি থেকেও বিচ্ছিন্ন পার্ক ও মাঠ শুরু করে যুগলযাত্রা।
নতুন যাত্রায় এই জায়গা দুটি খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার কাজ প্রায় শেষের পথে। পার্কের মাঝবরাবর তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য ফোয়ারা। গাছগুলো অক্ষত রেখে সেগুলো ঘিরেই গড়ে উঠেছে শিশুদের খেলার জায়গা। মাঠ ও পার্কের চারদিকে বানানো হয়েছে সুদৃশ্য হাঁটাপথ, সাইকেল লেন। চলছে সুদৃশ্য ফটক, সংবাদপত্র পাঠের জায়গা আর শৌচাগার নির্মাণের কাজ। বাকি আছে ব্যায়ামাগার ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে প্রক্রিয়া। সব কাজ শেষ করে আগামী দেড়–দুই মাসের মধ্যে মাঠ ও পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে আশা করছেন প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তাজমহল রোডের এই জায়গা মকবুল হোসেন মাঠ ও পার্ক নামে পরিচিত। নতুন করে এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পের আওতায় উত্তর সিটির মোট ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠ উন্নয়নের কাজ চলছে।
মকবুল হোসেন খেলার মাঠ এবং পার্কের অবস্থান তাজমহল রোডের সি ব্লকে কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের ঠিক বিপরীত পাশে। এর পশ্চিম অংশে মিনার মসজিদ। বাকি তিন দিক সড়ক–সংলগ্ন।
গত শুক্রবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠের তিন পাশ টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মসজিদের দিকটি বাদে বাকি অংশগুলোতে লোহার শিক দিয়ে তৈরি সীমানাবেষ্টনী নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পার্কের ভেতর বাচ্চাদের খেলার জন্য নির্ধারিত জায়গাগুলোতে চলছে ঘাস লাগানোর কাজ। মাঠের অংশে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। মাঠ থেকে পার্কের উচ্চতা খানিকটা বেশি।
কথা হয় এই কাজের অন্যতম ঠিকাদার ওয়াসিম চন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, সব মিলিয়ে প্রকল্পের অবকাঠমোর কাজের ৮০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। কাজ তদারকির জন্য পার্কের মধ্যে তৈরি একটা অস্থায়ী ঘরে বসে প্রকল্পের প্রকৌশলী রায়হান কবির বলেন, পার্ক ও মাঠ মিলিয়ে প্রকল্পের মোট জায়গার পরিমাণ সাড়ে তিন একরের বেশি। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
রায়হান কবিরের কাছ থেকে জানা যায়, আগে এই মাঠটিতে ঈদের জামাত হতো। তাই মাঠের পশ্চিম অংশে একটি মিম্বর থাকবে। যাতে ঈদের জামাত আয়োজন করা যায়। এ ছাড়া মাঠের উত্তর–পূর্ব কোণে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত হবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। মাঠ ও পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনে নতুন করে লাগানো হবে বাহারি ফুল–ফলের গাছ।
এ কাজটির নকশা প্রণয়ন করেছে ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পার্ক ও মাঠকে একীভূত করে ফেলার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিত্তির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক জহির প্রথম আলোকে বলেন, ‘নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ, তাঁরাই হবেন এর মূল ব্যবহারকারী। এই শহরে এমনিতেই উন্মুক্ত জায়গার খুব অভাব। তাই মাঠ ও পার্কের মাঝখানের দেয়ালটি উঠিয়ে দিয়ে জায়গাটি আরও উন্মুক্ত করে তোলার একটা প্রচেষ্টা ছিল। যাতে দৃষ্টিসীমা আরেকটু প্রসারিত হতে পারে। সেই সঙ্গে আমরা চেয়েছি এই বিনোদনের জায়গা যেন সবার হয়ে ওঠে। সব বয়সী মানুষ যেন এটা ব্যবহার করতে পারেন। সে অনুসারে জায়গাটির সমন্বিত ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি আমরা।’
ইশতিয়াক জহির আরও বলেন, নতুন নকশা অনুসারে মাঠের গড়ন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন সেখানে পানি না জমে। পার্কের ভেতর সব বয়সী মানুষের বিনোদন ও অবসর কাটানোর জন্য রাখা হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। এ পর্যায়ে সব কাজ শেষ হলে এর ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশীদার করে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।