শহীদনগরে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অজানা

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর ৩ মার্চ লালবাগের শহীদনগরে নিষিদ্ধ রাসায়নিক, প্লাস্টিক, পলিথিনের কারখানা এবং গুদামের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল ডিএসসিসির নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স। তখন বাধা দিয়েছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। টাস্কফোর্সের সদস্যদের অবরুদ্ধও করে রেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু গত শনিবার রাতে এই শহীদনগরেই চুড়ি কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটল। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি।

শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে শহীদনগরের জগন্নাথ সাহা রোডে পাকা দেয়ালের ওপর টিনের ছাউনি দেওয়া একতলা মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে বহু দোকান পুড়ে গেছে। ওই মার্কেটে চুড়ির কারখানা, কাগজ, প্লাস্টিক, পলিথিন পণ্যের গুদাম, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ফ্রিজের দোকান ছিল। এর সঙ্গে বড় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজ ছিল। আগুন তাৎক্ষণিক ছড়িয়ে পড়ায় সব মালামাল পুড়ে গেছে। এই মার্কেটসংলগ্ন একটি দ্বিতল বাড়ির সব আসবাব আগুনে পুড়ে গেছে। তবে গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তারা অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানাতে পারেনি। তবে সংস্থাটির ধারণা, চুড়ি কারখানার বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদাম থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ৭১ জন মারা যান। এই ঘটনার এক মাস তিন দিনের মাথায় শহীদনগরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। তবে কেউ আহত হয়নি। চুড়িহাট্টা থেকে শহীদনগরের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহীদনগরে পুড়ে যাওয়া অধিকাংশ দোকান, গুদাম ও কারখানার ট্রেড লাইসেন্স ছিল না। কারখানাগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেয়নি। কারখানাগুলোর বৈদ্যুতিক ও গ্যাস–সংযোগও ছিল অবৈধ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদনগরের জগন্নাথ সাহা রোডের ১০২ নম্বর হোল্ডিংয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া এই মার্কেটের সামনে মানুষের ভিড়। মার্কেটটির চারপাশে ফটকে তালা দেওয়া। ভেতরে ৮ থেকে ১০ জন লোক কারখানা ও গুদামগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এর মধ্যে মার্কেটের পশ্চিম অংশ ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজ। সেখানে থাকা চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুড়ে গেছে। পাশেই ছিল চুড়ির কারখানা। সেখানে ছড়িয়ে আছে চুড়ি।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজের মালিকের ছেলে মো. রাজন বলেন, শনিবার রাতে তিনি গ্যারেজের সামনেই ছিলেন। হঠাৎ চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে দৌড়ে মার্কেট থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু আগুন কোথা থেকে লেগেছে, তা তিনি বলতে পারেননি।

এই মার্কেটের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি দ্বিতল বাড়ি। এর দ্বিতীয় তলায় চারটি পরিবার বাস করত। আগুনে তাদের বাসার সব জিনিস পুড়ে গেছে। পোড়া ঘরে মলিন মুখে বাসিন্দাদের বসে থাকতে দেখা গেছে।

এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় একটি ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন শিল্পী বেগম। তিনি বলেন, আগুন ছড়ানোর আগে তিনি রান্না করছিলেন। হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকারের শব্দ শুনে এক ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। গতকাল সকালে ঘরে ঢুকে দেখেন, তার ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ৫০ মিনিট পানি ছিটিয়ে তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ তাঁরা নিশ্চিত হননি, অনুসন্ধান চলছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও টাস্কফোর্স দল-১–এর আহ্বায়ক এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কারখানা বা গুদামের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযান অব্যাহত আছে। টাস্কফোর্স কঠোর থেকে আরও কঠোরভাবে কার্যক্রম চালাবে। তবে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বন্ধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।