সেই পথশিশুরা পাসপোর্ট পেয়েছে, বিশ্বকাপেও খেলবে

লন্ডনে স্ট্রিট চিলড্রেন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছে আট পথশিশু। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
লন্ডনে স্ট্রিট চিলড্রেন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছে আট পথশিশু। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন

সানিয়া মির্জা, জেসমিন আক্তার, স্বপ্না আক্তার, আরজু রহমান, রাসেল ইসলাম রুমেল, আবুল কাশেম, রুবেল ও নিজাম হোসেন পাসপোর্ট হাতে পেয়েছে। এই আট শিশু চলতি বছরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত স্ট্রিট চিলড্রেন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে খেলতে যাওয়ার জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই তারা লন্ডন যেতে ভিসার জন্য আবেদন করবে।

চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত লন্ডনে পথশিশুদের জন্য এ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। এই বিশ্বকাপে খেলার জন্য বাংলাদেশের লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (লিডো) তত্ত্বাবধানে থাকা এই আট শিশু নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে অনুমোদন পাওয়া যায় গত বছরের অক্টোবরে।
লন্ডনের স্ট্রিট চাইল্ড ইউনাইটেড এই বিশ্বকাপে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপের পাশাপাশি পথশিশুদের নিয়ে এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পথশিশুদের প্রতি যে অবজ্ঞা-অবহেলা, তা দূর করা এবং সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চালানো হবে। এতে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ডসহ ১০টি দেশের ৮০ পথশিশু (যারা একসময় পথে ছিল) অংশ নিচ্ছে। সব দেশ থেকে চারজন মেয়ে এবং চারজন ছেলে শিশুকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
সানিয়া মির্জাসহ এই আট শিশুর একসময় পরিচয় ছিল পথশিশু হিসেবে। তাদের মা-বাবা নেই, পরিবার নেই। তারা এতিম। অভিভাবক না থাকার জন্যই পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। ভিসা পেয়ে গেলে খেলতে যাওয়ার পথে আর বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় তারা খেলতে যাবে।
৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে ‘মা-বাবা নেই, তাই বলে বিশ্বকাপ খেলা হবে না তাদের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন এবং ভিডিও প্রকাশিত হয়। প্রথম আলো ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যম এই শিশুদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করে। গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সই করা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর বরাবর এক চিঠিতে এই আট শিশুর পাসপোর্ট ইস্যু করতে লিডো কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
কেরানীগঞ্জের বছিলায় লিডো পিস হোমে এই শিশুরা থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলাসহ সব ধরনের সুযোগ পাচ্ছে। এখন তাদের নামের আগে সে অর্থে আর পথশিশু ব্যবহার করা হয় না। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন এই শিশুদের অভিভাবক।
এই ধরনের অভিভাবকহীন শিশুদের পাসপোর্ট করতে হলে অভিভাবকত্ব নিতে হলে আদালতের অনুমতি লাগে। আদালতের অনুমতির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। এই সব প্রক্রিয়ার মধ্যে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল ফরহাদ হোসেনের।
ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোর্ট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বল্প সময়ে অনুমতি ও অনুমোদন আনতে পেরেছিলাম। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। এই শিশুদের মুখে হাসি ফুটেছে।’
২০১০ সাল থেকে লিডো পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করছে। লিডো পিস হোমটি পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় ব্যক্তিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়।
ফরহাদ হোসেন জানালেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই শিশুদের জন্য একজন প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ২৭ মার্চ থেকে শিশুরা মোহাম্মদপুরের একটি মাঠে প্রশিক্ষকের অধীনে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাবে।