সংসদে যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে বন্ধ হয়নি আলোচনা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি বলে আসছে তাদের নির্বাচিত প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না। তবে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে বিএনপি শপথ নিতে পারে বলে গুঞ্জনও ছিল। তবে বরাবরই এসব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।

অবশ্য ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে নির্বাচিত কয়েকজন সাংসদ এবং বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রথম আলোকে বলছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে তো কিছু নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না বা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে নির্বাচনে যাব না—বিএনপি তো এমন অবস্থান থেকে সরে এসেছিল। ফলে এখনো এক মাসের বেশি সময় হাতে আছে, দেখা যাক কী হয়?

ওই নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার শর্তে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। তাই সংসদে যাওয়ার বিষয়টি এখনো দলের মধ্যে হিসাব-নিকাশ পর্যায়ে আছে। যদিও তাঁরা বলছেন, সংসদে যাওয়া নিয়ে দলে আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ছয়টি আসনে জিতেছিল। তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দল গণফোরাম পায় দুটি আসন। এর মধ্যে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ৭ মার্চ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেন। সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরামের আরেক নির্বাচিত সদস্য মোকাব্বির খানও শপথ নিতে আগ্রহী। ৭ মার্চ তাঁর শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও সেদিন তিনি নেননি।

মোকাব্বির খান প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ মার্চ শনিবার গণফোরামের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। শপথের বিষয়ে ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট থেকে বাকি যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা যদি সবাই মিলে যাই, তা সুন্দর দেখায়। আর তাঁরা যদি না যেতে চান তাহলে আমরা আগামী কিছুদিনের মধ্যে আমাদের মতো সিদ্ধান্ত নেব।’

সংসদ অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে হয়। সে হিসেবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শপথ নেওয়ার সময় পাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা। নির্বাচনকে বর্জন করে সংসদে যাবে না বলে বারবার বলে আসছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন নেতা। তবে অনেক দিন থেকেই গুঞ্জন ছিল, সংসদে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে সরকারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে বিএনপি এসবকে বরাবরই উড়িয়ে দিয়েছে। ৮ মার্চ নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও একে গুঞ্জন বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দল থেকে এখন পর্যন্ত শপথ নিতে না করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সংসদে যাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা নেই। তবে তিনি বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে যদি খালেদা জিয়ার মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়, তা খারাপ হবে না। আলোচনা হলে সেটা ভালো কিছুই হবে বলে মনে করেন এই নেতা।

সংসদে যেতে হলে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ কয়েকটি বিষয়কে এখন সামনে রাখার কথা ভাবছে বিএনপি। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, শপথের বিষয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে। যদি শপথ নেওয়া হয় তবে তিনটি কারণকে সামনে রাখবে দলটি। এক. বিএনপি-রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা, দুই. সংগঠনের স্বার্থে সুযোগ কাজে লাগানো এবং ৩. খালেদা জিয়ার মুক্তি বা জামিন। বিএনপির একজন নেতা বলেন, গেলে সবাই একসঙ্গে যাবেন, তা না হলে নয়। তবে পর্দার আড়ালে একটা সমঝোতা হলেই কেবল সংসদে যাবেন তাঁরা।

সংসদে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সদস্যরাও। ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই জানিয়ে বলেন, অবস্থার পরিবর্তনও হতে পারে। দল থেকে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘সে ধরনের একটা কিছু মনে হচ্ছে। যেমন আমাদের নেত্রীর মুক্তি, জামিনে মুক্তি। আমাদের পক্ষ থেকে হালকা দাবি–দাওয়া হইছে।’

বিএনপি থেকে কারও শপথ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় আছে শপথ নেওয়ার। আমরা যে জিনিসটা জানতে পারছি, হয়তোবা হতে পারে। তবে হয়তোবা তো অনেক কিছুই। এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না।’ তবে তিনি বলেন, এলাকার মানুষ তাঁকে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে বলছেন। তবে দল করি তাই দলের স্বার্থও দেখতে হবে। দেখা যাক কী হয়।