এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় ২৬ মার্চ

বাঙালি জাতির জীবনে অনন্য এক দিন আজ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ মঙ্গলবার। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল বিশাল। বাঙালি চেয়েছিল এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, যা প্রতিষ্ঠিত হবে কিছু আদর্শের ভিত্তির ওপর। সেসব আদর্শের দিকে ফিরে তাকানোর দাবি নিয়ে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। ৪৮ বছর আগে এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশকে দখলদারমুক্ত করতে সংগ্রামে নামার আহ্বান জানান।

স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেই কালরাত স্মরণে গতকাল সোমবার গণহত্যা দিবস পালন করা হয়। গত রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া সারা দেশে প্রতীকী ব্ল্যাকআউট বা আলো নিভিয়ে কালরাত স্মরণ করে জাতি। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।
শোক ও স্বাধীনতার গর্বিত মুহূর্ত খুব কম জাতির জীবনে পাশাপাশি এসেছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও পৃথকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করবে।
বাসস জানায়, ঢাকাসহ সারা দেশে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ স্মৃতিসৌধে একাত্তরে শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

বাণী ও কর্মসূচি
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। তাঁরা দেশের মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরও অর্থবহ করতে দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
স্বাধীনতা দিবসে আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণযোগাযোগ অধিদপ্তর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ থেকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌপথে প্রখ্যাত শিল্পীদের অংশগ্রহণে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশনের আয়োজন করেছে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো আজ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।
এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে আজ। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ বেলা দুইটা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ সকালে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে সকালে কুচকাওয়াজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।