ভোট না দেওয়ায় ৪ নারীকে মারধরের অভিযোগ

ময়মনসিংহের নান্দাইলে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক এক সদস্যের সমর্থকেরা ১০ টাকা কেজির চাল কিনতে আসা চারজন নারীকে অশালীন গালিগালাজ ও মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউপি নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের গালিগালাজ ও মারধর করা হয়।
উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের আখড়া মোড়ে গতকাল সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ওই নারীরা গতকাল বিকেলে ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়ে বিচার দাবি করেন। ইউএনও তাঁদের থানায় পাঠানোর পাশাপাশি তাঁর কাছেও একটি অভিযোগ দিতে বলেন।

ইউএনও মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমামের কার্যালয়ে আসা রামকৃষ্ণপুর গ্রামের হাসনা (৩৫), ফিস্টুন্নাহার (৪০), চানবানু (৫৫), নাজমাসহ (৩৫) আটজন নারী বলেন, তাঁদের স্বামীদের নামে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল ক্রয়ের কার্ড রয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তাঁদের এলাকার দুইবারের ইউপি সদস্য আমির হোসেন ওরফে লিটন পরাজিত হন। এরপর থেকে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের লোকজন পরাজিত ইউপি সদস্যের হুমকির মুখে হাটবাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে। চলতি সপ্তাহ থেকে নান্দাইলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হয়। বীর বেতাগৈর ইউনিয়নে আখড়া মোড়ে ডিলার মো. রিপন মিয়া ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছেন। তাঁদের স্বামীরা ভয়ে আখড়া মোড়ে না গিয়ে তাঁদের স্ত্রীদের আখড়া মোড়ে পাঠান ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার জন্য।

হাসনা বলেন, ডিলারের দোকানে যাওয়ার পর তাঁদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন আমির হোসেনের লোকজন। একপর্যায়ে আমিরের ভাই সাহরাব মিয়া তাঁদের চারজনকে মারধর করেন। অন্যরা দৌড়ে পালিয়ে যান।

চানবানু বলেন, ‘আমরা কোন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি, সেটি তো অন্য কারোর জানার কথা নয়। কিন্তু পরাজিত প্রার্থী আমির নিজের পরাজয়ের জন্য আমাদের দায়ী করছেন কেন।’

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. রফিক উদ্দিন বলেন, ‘আমির ও তাঁর সহযোগীদের মারধরের হুমকির কারণে আমরা চলাচল করতে পারছি না। আমাদের সন্তানদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।’ কাঠমিস্ত্রি মো. হানিফ মিয়াও একই কথা বলেন।
ইউপি সদস্য আবদুল জলিল বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে আমির রামকৃষ্ণপুর গ্রামের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছেন। আমি তাঁর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চাই। সে পথও তিনি বন্ধ করেছেন।’ আবদুল জলিল আফসোস করে বলেন, ‘বিজয়ী হয়ে আমি আমার গ্রামের লোকজনকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছি।’

১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রির ডিলার রিপন মিয়া মুঠোফোনে বলেন, কয়েকজন নারীকে তিনি দৌড়ে পালাতে দেখেছেন। রিপনের দাবি, তিনি দোকানের ভেতরে থাকায় প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, তা তিনি জানতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আমির গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের লোকজনের অভিযাগ সত্য নয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘কয়েকজন নারী থানায় এসে ঘটনাটি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আমি তাঁদের লিখিত এজাহার দিতে বলেছি।’