নারকীয় হত্যাযজ্ঞ 'গণহত্যা' হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত স্মরণে যশোরে হাজার মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। পরে মোমবাতি হাতে নিয়ে আলোর মিছিল বের করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর। গতকাল সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানে।  ছবি: প্রথম আলো
২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত স্মরণে যশোরে হাজার মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। পরে মোমবাতি হাতে নিয়ে আলোর মিছিল বের করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর। গতকাল সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানে। ছবি: প্রথম আলো

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবসের আয়োজনে বক্তারা বলেছেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাওয়ার বাস্তবতা নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যাযজ্ঞের ঘটনাগুলোর ‘গণহত্যা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাওয়াটার বিষয়টি জোরালো হওয়া উচিত।
নানা আয়োজনে খুলনায় গতকাল সোমবার গণহত্যা দিবস স্মরণ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল বিকেলে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের উদ্যোগে গণহত্যা জাদুঘর প্রাঙ্গণে আলোচনা অনুষ্ঠান ও আলোক প্রজ্বালনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল, ‘১৯৭১: গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ আলমগীর এতে সভাপতিত্ব করেন। বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ মাসজুড়ে চলা হত্যাযজ্ঞের ঘটনাগুলোর ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি চাওয়ায় এখন বাংলাদেশের ভূমিকা আরও জোরালো হওয়া উচিত। কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সভায় বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টি সম্পাদক শেখ বাহারুল আলম, ট্রাস্টি সদস্য হুমায়ূন কবির, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
গতকাল সকালে খুলনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। সভায় মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনা অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, ভারতে গমনকালে শরণার্থীদের ওপর নিপীড়ন, চুকনগর গণহত্যার বিষয়গুলো উঠে আসে।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ইপিআর হেডকোয়ার্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো, ঘুমন্ত সাধারণ মানুষ—সবকিছুই তাদের নিষ্ঠুরতার শিকারে পরিণত হয়। ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে। এ হত্যাযজ্ঞ চলে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়জুড়ে। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আঞ্চলিক তথ্য অফিস খুলনার উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা ম. জাভেদ ইকবাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউর রহমান, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাঈদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর আলম সিদ্দিকী, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলমগীর কবীর, মো. মাহবুবার রহমান, কাজী মাহমুদ আলী খোকন প্রমুখ।
খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় শহীদ হাদিস পার্কে মোমবাতি প্রজ্বালন করে। দিবসটি স্মরণে খুলনা সিটি করপোরেশন পরিচালিত খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কেসিসি উইমেন্স কলেজ প্রাঙ্গণে গণহত্যার স্মৃতিচারণা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সংঘটিত এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা সবার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া, নগরের আহসান উল্লাহ কলেজ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।