শরাফতের রক্তই যেন পতাকার লাল বৃত্ত

শরাফত আলী
শরাফত আলী

অমায়িক আচরণ আর লাজুক প্রকৃতির জন্য সবার প্রিয় ছিলেন শরাফত আলী। অসচ্ছলতার কারণে এমএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। এটিও লজ্জায় বলতে পারেননি সহপাঠীর কাছে। এই অমায়িক ছেলেটিকেই একদিন বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে হলো। তাঁর রক্তই যেন হয়ে উঠল দেশের পতাকার লাল বৃত্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের একটি ভবনের নাম এখন শরাফত আলী ভবন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু হওয়া পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। মুক্তির সংগ্রামে অটুট বাঙালি। তাঁদের দমাতে অপারেশন সার্চলাইট চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা। শরাফত তাঁদের একজন।

১৯৪৩ সালে কুমিল্লা জেলার সদর থানার দক্ষিণ রামপুর গ্রামে জন্ম শরাফত আলীর। ১৯৬০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং দুই বছর পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। একই কলেজ থেকে নেন বিএসসি ডিগ্রি ১৯৬৪ সালে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে গণিত বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম পর্ব পরীক্ষায় মেধাবী শরাফত প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে এমএসসি শেষ বর্ষ পরীক্ষায় আর্থিক টানাপোড়েনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরে ১৯৬৭ সালে আবার পরীক্ষায় বসেন এবং প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

এ বছরই গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যুক্ত হন তিনি। ১৯৭০ সালে তৎকালীন ঢাকা হলের (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) সহকারী আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী কামানের গোলা ছোড়ে। শরাফতের পাশের রুমে থাকতেন পদার্থবিদ্যার শিক্ষক আতাউর রহমান খান খাদিম। তাঁর বাসায় আগুন ধরে যায়। ভোররাতে চুপি চুপি শরাফত আলী সেই আগুন নেভাতে যান। তাঁকে দেখে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনী। তারপর নৃশংসভাবে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁকে হত্যা করে।

শরাফত আলী ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমীও। তাঁর মামাতো ভাই মো.আবু তাহের স্মৃতিচারণা করছিলেন এভাবে, ‘শরাফত ভাই যখন ছুটিতে বাড়িতে আসতেন, আমাকে নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতেন। তিনি নিসর্গপ্রেমী ছিলেন। ফুল, পাখি, গাছগাছালি তাঁকে খুব টানত। তাঁর নামে কুমিল্লায় কিছুই নেই। আমাদের দাবি, কুমিল্লায় তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে কিছু করা হোক।’