দখলদারের গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে বানিয়াবাজার খাল

জামালপুর শহরের বানিয়াবাজার খালের ভেতর দেয়াল নির্মাণ করে ভরাট করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে বানিয়া বাজার এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
জামালপুর শহরের বানিয়াবাজার খালের ভেতর দেয়াল নির্মাণ করে ভরাট করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে বানিয়া বাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

অবৈধ দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে জামালপুর পৌর শহরের বানিয়াবাজার খালটি। শহরের পূর্বাঞ্চলের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র পথ এই খাল। কিন্তু খালটি রক্ষায় প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় সেই পানিনিষ্কাশন–ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
স্ত্রীর পৈতৃক জমি দাবি করে সম্প্রতি এক প্রভাবশালী ওষুধ ব্যবসায়ী খালের ভেতর একটি পাকা ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন। যদিও দখলের অভিযোগ পেয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। বানিয়াবাজার সেতুর খুব কাছেই খালটির একদম ভেতরে দালানটি করছেন ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর স্ত্রী পারভিন সুলতানার পৈতৃক সাড়ে সাত শতাংশ জমি এখানে রয়েছে। সেখানেই তিনি ভবন নির্মাণ করছেন।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের বানিয়াবাজার এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে খালটির শুরু। এ এলাকার দুটি স্থানে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। বানিয়াবাজার সেতুর পশ্চিম পাশে খাল ভরাট করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এর পাশে একদম খালের ভেতর দালান নির্মাণের জন্য পিলার বসানোর কাজ চলছে। তার পাশে খালের ওপর ছাদ দিয়ে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দক্ষিণ পাশে পাঁচটি জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ডাকপাড়া এলাকায়ও দুটি স্থানে খাল ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে এসব স্থানে খাল সরু হয়ে গেছে।

বানিয়াবাজার ও ডাকপাড়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখাখাল এটি। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বানিয়াবাজার হয়ে ডাকপাড়া এলাকা পর্যন্ত খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। পাঁচ-সাত বছর আগেও খালটিতে ধরা পড়ত ছোট–বড় অনেক মাছ। কিন্তু দখল আর দূষণের কারণে মাছ তো দূরের কথা, ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে খালটি। খালের দুই পারের মানুষ এর পানি দৈনন্দিন কাজেও ব্যবহার করতে পারত। এখন দূষণের কারণে সেভাবে পানিও ব্যবহার করতে পারছে না। বানিয়াবাজার সেতুর পাশেই বাড়ি ৬৫ বছর বয়সী আনোরুল করিমের। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মই এ এলাকায়। এই খালে সারা বছর পানি থাকত।

অনেকেই মাছ শিকার করেও জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু গত সাত-আট বছর ধরে এই খাল হারিয়ে যাচ্ছে। খালটি অনেক বড় ছিল। এখন ক্রমেই খালটি বিভিন্ন জায়গায় সরু হয়ে যাচ্ছে। যার যখন প্রয়োজন, তখন তিনি খালটিকে অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন।’ আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘আমরা সারা জীবন দেখলাম, সেটি একটা খাল। হঠাৎ করে নিজের জমি দাবি করে সেখানে দালান নির্মাণ করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদও করেন না। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তার বিপদ চলে আসবে।’

জানতে চাইলে ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খালটির পূর্ব পাশে বাঁক রয়েছে। এই জমিটা আমার স্ত্রীর বাবার সম্পত্তি। সাড়ে সাত শতাংশ জমির সব কাগজপত্রই আমাদের রয়েছে।’ এত দিন পর হঠাৎ জমিতে ভবন নির্মাণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখন প্রয়োজন তাই করছি। এটা খালের জমি না।’
জামালপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল পাশা বলেন, পুরো খালটি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই পড়েছে। ওই ওষুধ ব্যবসায়ীর সব কাগজপত্র রয়েছে। সেটা নাকি তাঁদেরই জমি। তবে অন্য লোকজন খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। খালের আশপাশের বসবাসকারীরাই খালটিকে ক্রমেই ভরাট করে দখল করেছেন। পুরো খালটি এখনই দখলমুক্ত করার প্রয়োজন।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি প্রথম আলোকে বলেন, খালটির মধ্যে পাকা ভবন নির্মাণ করার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জমির মালিক ওই জমির কাগজপত্র রয়েছে বলে দাবি করছেন। তাই জমির কাগজপত্র দেখা হচ্ছে। খাল দখল করে কাউকেই স্থাপনা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। খালটির অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। অবৈধ দখলদার থাকলে তালিকা করে দখলমুক্ত করা হবে।