কুমিল্লার সড়কে প্রাণ ঝরল ২ স্কুলছাত্রীর

সড়কে প্রাণ ঝরছেই। সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনা থামছেই না। আজ মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছুটির দিনটিতেও ঘাত ট্রাক প্রাণ কেড়েছে দুজনের। নিহত দুজনই স্কুলছাত্রী। আর দুটি ঘটনাই ঘটেছে কুমিল্লায়।

সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। আজ রাতে মামলা করেছেন নিহত আবরারের চাচা। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব।

সকাল সাড়ে সাতটায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে লরির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে রিয়া রানী সাহা (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। সে বিজয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী ছিল। রিয়ার বাড়ি সদর দক্ষিণ উপজেলার বারোপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিজয়পুর এলাকায় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিজয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে ফুলের টব ভাঙচুর করে।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খাদেমুল বাহার বলেন, বিজয়পুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনটি লেগুনায় করে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে যাচ্ছিল ছাত্রছাত্রীরা। এর মধ্যে একটি লেগুনায় ১২ আসনের বিপরীতে ২৭ জন ছিল। লরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে লেগুনাটি মহাসড়কে উল্টে যায়। এতে রিয়া সাহা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয় নয়জন শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

খাদেমুল বাহার বলেন, এ ঘটনার পর বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক শাহেদ আলম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক খান উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকা থেকে পালিয়ে যান।

অন্য ঘটনায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় আরেক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। উপজেলার কুটুম্বপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় মাহমুদা আখতার (১৪) নামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী নিহত হয়। আজ সকাল পৌনে ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এতে সড়কের উভয় দিকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহিদুল বলেন, এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর এবং তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা অবরোধ তুলে নেয়। এরপর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

নিহত স্কুলছাত্রী মাহমুদা কুটুম্বপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার নাম নুরুল উসলাম। স্কুলের কাছের নাজিরপুর গ্রামে তাদের বাড়ি।

গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ দুজন এবং ফেনীতে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী ঢাকার নদ্দায় বাসচাপায় নিহত হন। সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন আবরার। এ ঘটনার পর বিইউপি–সংলগ্ন এলাকাসহ রাজধানীর অন্তত ১০ জায়গায় সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে বিইউপির ১০ শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করে। তারা বিক্ষোভ সাত দিনের জন্য স্থগিত রাখে। আবরার নিহত হওয়ার ঘটনার পরদিনই গাইবান্ধায় ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রী এবং নাটোরের গুরুদাসপুরে কলেজছাত্রী নিহত হন।