তফসিলের পর ময়মনসিংহ সিটিতে নির্বাচনী আমেজ

এহতেশামুল আলম, মোহিত উর রহমান, ইকরামুল হক
এহতেশামুল আলম, মোহিত উর রহমান, ইকরামুল হক

নবগঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই তৎপর ছিলেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। গত সোমবার তফসিল ঘোষণার পর মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রত্যাশীরা সরব হয়েছেন। সিটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। আগামী ৫ মে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশন গত সোমবার তফসিল ঘোষণা করার পর শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে মেয়র পদে কারা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হবেন, এ আলোচনা তুঙ্গে। তবে দলীয়ভাবে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। এ ছাড়া প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৩০টি কেন্দ্রের সব কটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করার বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ইকরামুল হক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। গত সোমবার তফসিল ঘোষণার পর ওই তিন নেতার পক্ষে ময়মনসিংহ নগরে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ওই তিন নেতার সমর্থকেরা পোস্ট দেন। শেষ পর্যন্ত কে হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, এটিই সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

গতকাল দুপুরে এহতেশামুল আলম বলেন, ‘আমি সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আপাতত এটুকুই বলি। উৎসব মুখর পরিবেশে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, এটি আমার প্রত্যাশা।’

মোহিত উর রহমান নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান। ইকরামুল হকের মুঠোফোনে গতকাল দুপুরে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

দলীয়ভাবে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে। সে ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করার সম্ভাবনা বেশি। তবে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কেউ দলীয় পরিচয় বহন করবেন না।

জানতে চাইলে নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, দলীয়ভাবে বিএনপির ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা খুব কম। কেন্দ্র থেকে এখনো এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। স্থানীয়ভাবে কেউ যদি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এটি দলীয় নির্বাচন নয়।

নির্বাচন কমিশন বলছে, সিটির মোট ১৩০টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের বিষয়টি মানুষের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ইভিএম প্রসঙ্গে নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিব্বির আহমেদ বলেন, ‘ইভিএমের অনেক বিতর্ক সম্পর্কে আমরা জানি। যদি ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়, তাহলে যেন সেটা “বিতর্কমুক্ত” হয়। পাশাপাশি ভোটারদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা যেন করা হয়।’

কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও উৎসব মুখর হওয়ার প্রত্যাশা করেন। সাহিত্য সংগঠক আলী ইউসুফ বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করি। ইভিএম নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিয়ে ভোটারদের কাছে ইভিএম পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।’

২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের গেজেট প্রকাশিত হয়। ১৫ অক্টোবর বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হককে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।

ময়মনসিংহ পৌরসভার আয়তন ছিল ২২ বর্গকিলোমিটার। চার গুণের বেশি বর্ধিত সীমানা নিয়ে গঠিত সিটি করপোরেশনের আয়তন ৯১ বর্গকিলোমিটার। মোট ৩৩টি ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। মোট ভোটার প্রায় ৫ লাখ।