৪২টি পরিবারের পানির ভরসা একটি মাত্র কুয়া!

৪২ পরিবারের ভরসা ছড়ার পাড়ের এই কুয়াটি। সম্প্রতি পানছড়ির লোগাং ইউনিয়নের ফাতেমা নগরের পেরাছড়ায়।  প্রথম আলো
৪২ পরিবারের ভরসা ছড়ার পাড়ের এই কুয়াটি। সম্প্রতি পানছড়ির লোগাং ইউনিয়নের ফাতেমা নগরের পেরাছড়ায়। প্রথম আলো

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের দুর্গম ফাতেমা নগর এলাকার পেরাছড়া গ্রামে ৪২টি পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের খাওয়ার পানির ভরসা একটি মাত্র কুয়া। বর্ষায় সময় বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হলেও শুষ্ক মৌসুম এলে বেড়ে যায় পানির ভোগান্তি। এলাকায় নেই কোনো সুপেয় পানির ব্যবস্থা।
সম্প্রতি পানছড়ির বাজার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একমাত্র খাওয়ার পানির উৎস কুয়াটি পাহাড়ের নিচে ছড়ার ধারে। ২০০ থেকে ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত পেরাছড়া গ্রাম থেকে বাসিন্দারা এসে এই কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করে।

পানি নিতে আসা দুই কিশোরী তৈমনা মারমা (১৩) ও আবুশি মারমা (১৫) জানায়, তারা এক ঘণ্টা ধরে পানি সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছে। কুয়ার পানিতে ময়লা থাকায় পানি নেওয়া যাচ্ছে না। ময়লা বসে গেলে তখন তারা পানি সংগ্রহ করবে। প্রতিদিন ভোরে পানি নিতে আসে তারা। এক কলসি পানি সংগ্রহ করতে লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা।

গ্রামের কার্বারি অ্যাপুয়া মারমা বলেন, গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার গরিব ও দিনমজুর। নলকূপ কিংবা রিংওয়েল বসানো খরচ তাঁদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে গ্রামের লোকজন উপকৃত হবে।

গ্রামের বাসিন্দা নেইম্রা মারমা (৭১) বলেন, গ্রামবাসীর পানির কষ্ট তিনি যুগ যুগ ধরে দেখে এসেছেন। সারা জীবন পানির জন্য কষ্ট করলেও শেষ বয়সে এসে আর পারছেন না। তিন মাস আগে পানি আনতে যাওয়ার সময় পাহাড়ে নিচে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যায় তাঁর। এরপর থেকে তিনি সপ্তাহে দুই-তিন দিন কষ্ট করে যান পাহাড় বেয়ে গোসল করতে আর পানি আনতে।

গ্রামবাসী জানায়, এই কুয়া থেকে গ্রামের সবার পানি ব্যবহার করতে হয়। বেশির ভাগ সময় পানি ঘোলাটে থাকে। এসব পানি ব্যবহারের ফলে গ্রামের লোকজন প্রায় সময় ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। তা ছাড়া গ্রামে কোনো উৎসব–অনুষ্ঠান হলে পানির জন্য ঝামেলায় পড়তে হয়।

লোগাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তর চাকমা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধারণত নলকূপ ও রিংওয়েল দেওয়া হয়ে থাকে। সেগুলোর গভীরতা ৫০-৬০ ফুটের বেশি নয়। ওই এলাকায় নলকূপ ও রিংওয়েল বসানোর চেষ্টা করা হলেও মাটি পাথুরে হওয়ার কারণে পানি পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে অতিরিক্ত বাজেট না থাকায় গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহযোগিতা ছাড়া ওই এলাকায় পানির সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের দুর্গম এলাকাগুলো বেশির ভাগই পাথুরে হওয়ার কারণে নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। তবে কোনো গ্রাম কিংবা এলাকা থেকে প্রকৌশল বিভাগের কাছে যদি আবেদন করা হয় তবে তা বিবেচনা করা হয়। পেরাছড়া এলাকায় কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা ভেবে দেখা হবে।