ইছামতী রক্ষায় অনশন

ইছামতী নদী রক্ষার দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ‘আমাদের ইছামতী’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা। গতকাল পাবনা শহরের ইছামতীর খেয়াঘাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ইছামতী নদী রক্ষার দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ‘আমাদের ইছামতী’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা। গতকাল পাবনা শহরের ইছামতীর খেয়াঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

পাবনা জেলা শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী দখল–দূষণে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্যে পুরো নদীর পানিই দূষিত হয়ে গেছে। এতে নদীর জলজ প্রাণবৈচিত্র্য তো বটেই, পুরো জেলার ব্যবসা–বাণিজ্য ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে যখন স্বাধীনতা দিবসের উৎসব চলছিল, তখন ইছামতী রক্ষায় অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন পাবনার কয়েকজন তরুণ। কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে ইছামতী নদী দূষণমুক্ত করে পুনরায় নদীতে প্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, গতকাল ভোর ৬টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের একদল তরুণ ইছামতী নদীর বড় ব্রিজের নিচে এসে অবস্থান নেন। তাঁরা নদীতীরের ময়লা–আবর্জনা সরিয়ে নিজেদের জন্য বসার জায়গা তৈরি করেন। মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে চারদিকে কয়েল জ্বালিয়ে শুরু করেন অনশন। ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করেন এই তরুণেরা।
অনশনকারী দলটির নেতৃত্ব দেন স্বেচ্ছাসেবী মানবকল্যাণমূলক সংগঠন তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মাহমুদ, চিকিৎসক আহম্মেদ তাউস ও শিক্ষক দেওয়ান আজিজুল ইসলাম। পরে তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পাবনা সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাওয়াল বিশ্বাস, পাবনার পৌর কাউন্সিলর রাজীবুল হাসান, পাবনা ড্রামা সার্কেলের সভাপতি ফারুক হোসেন চৌধুরী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পাঠশালার সম্পাদক শিশির ইসলামসহ বিভিন্ন সমাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অনশনে অংশ নেন।
দেওয়ান মাহবুব বলেন, ‘স্বাধীনতা মানে শুধু স্বাধীন দেশ নয়, শান্তি, শৃঙ্খলা ও সুন্দর পরিবেশে বসবাস করারও অধিকার। কিন্তু শুধু ইছামতী নদীর দূষণ আমাদের সে অধিকার খর্ব করছে। দিনে দিনে পাবনার বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে। মশার উপদ্রপে মানুষ অতিষ্ঠ। ইছামতী না বাঁচলে আমরা বাঁচব না। তাই এই স্বাধীনতা দিবসে আমাদের একটাই চাওয়া, ইছামতী রক্ষা করা হোক।’
এদিকে তরুণদের এই কর্মসূচির খবরে বেলা দুইটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন পাবনা-৫ আসনের সাংসদ গোলাম ফারুক। তিনি অনশনকারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান। পরে তিনি অনশনকারীদের মুখে পানি তুলে দেন। একই সঙ্গে ইছামতী রক্ষায় তাঁর তরফ থেকে করণীয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন।
সাংসদ গোলাম ফারুক বলেন, ‘ইছামতীর পানিপ্রবাহ দেখে আমি বড় হয়েছি। এই নদীর সঙ্গে আমার নিজেরও অনেক আবেগ–অনুভূতি জড়িত। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এখনো আমরা নদীটি রক্ষায় তেমন কিছু করতে পারিনি। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা সরকারের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা পাঠিয়েছি। আশা করছি, খুব শিগগির ইছামতী দখলমুক্ত, দূষণমুক্ত ও প্রবহমান হবে।’
শহরের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে পাবনা শহরে মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইছামতীর দুই পাড় দখল হতে থাকে। একপর্যায়ে দখল ও দূষণে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়। নদীটি রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন–সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন শহরবাসী। গঠন হয়েছে ইছামতী নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এই কমিটি কয়েক বছর ধরে নদী রক্ষায় সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত দখলদার উচ্ছেদ ও নদী খননে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগের তালিকার সঙ্গে নতুন কিছু দখলদার যুক্ত হয়েছেন। এখন কমিশনের নির্দেশনা পেলে যৌথভাবে একটি অভিযান চালিয়ে দখলদার উচ্ছেদ করা হবে।