ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ঘেঁষে চলছে টিলা কর্তন

বাড়ি নির্মাণের জন্য কাটা হচ্ছে বড় আকৃতির টিলা। গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ওলিরঘাট গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
বাড়ি নির্মাণের জন্য কাটা হচ্ছে বড় আকৃতির টিলা। গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ওলিরঘাট গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ওলিরঘাট গ্রামে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রায় তিন মাস ধরে একটি বড় আকৃতির টিলা কাটা চলছে। ওই টিলা ঘেঁষেই স্থানীয় গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বাড়ি। টিলা কাটায় চেয়ারম্যানের পাকা বসতঘরও ঝুঁকিতে পড়েছে।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিলা কাটার বিরুদ্ধে আমি প্রথমে বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু যাঁরা টিলা কাটছেন, তাঁরা আমারই চাচাতো ভাই। তাঁরা বিষয়টি মানেননি। উল্টো তাঁরা আমাকে ভুল বোঝেন। টিলা কাটা অব্যাহত থাকায় নিজেও ক্ষতির মুখে পড়েছি। না পারছি কিছু বলতে, না পারছি সইতে।’

সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে দেখা গেছে, জুড়ী-লাঠিটিলা সড়কের গোয়ালবাড়ী এলাকা থেকে ওলিরঘাট গ্রামের রাস্তা চলে গেছে। গ্রামের ভেতরে পাকা সড়কের দুই পাশে গাছগাছালিতে ভরা ছোট-বড় টিলা। এসব টিলার ওপর অনেকে পাকা বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। প্রবাসী-অধ্যুষিত গ্রামটির একটি বড় টিলার এক পাশে মরহুম নাজিম উদ্দিন আহমদ এবং অপর পাশে নাজিমের ভাই গোয়ালবাড়ী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম শামছ উদ্দিন আহমদের বাড়ি।

নাজিম উদ্দিনের ছেলেরা নতুন করে বাড়ি নির্মাণের জন্য তাঁদের মালিকানাধীন প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত একটি টিলা কেটে জমি সমান্তরাল করে ফেলেছেন। ওই টিলার মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে ঢালের নিচু জমি। টিলাটির উচ্চতা ৮ থেকে ১০ ফুট। এখন ওই স্থানে প্রবেশের জন্য টিলা কেটে রাস্তা করা হচ্ছে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন। শামছ উদ্দিনের বড় ছেলে শাহাব উদ্দিন আহমদ গোয়ালবাড়ী ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। টিলা ঘেঁষে শাহাব উদ্দিনের পাকা ঘর। টিলা কাটায় ওই ঘরটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

নাজিম উদ্দিন আহমদের ছোট ছেলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিমাদ আহমদ বললেন, তাঁরা তিন ভাই। বড় ভাই রাসেল আহমদ যুক্তরাজ্যে থাকেন। দুই-তিন মাস আগে বাড়ি ফিরেছেন। মেজ ভাই জুবেল আহমদ থাকেন ফ্রান্সে। টিলার ওপরে এক পাশে তাঁদের বসতঘরটি দেখিয়ে নিমাদ বলেন, এটি পুরোনো হয়ে গেছে। তাঁদের মা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। মায়ের জীবদ্দশায় তাঁরা নতুন করে পাকা ঘর নির্মাণ করতে চান। এ কারণে জমি সমান্তরাল করতে টিলা কাটিয়েছেন। এখন ওই জমির সঙ্গে মিলিয়ে প্রবেশপথের জন্য টিলা কেটে জায়গা সমান্তরাল করা হচ্ছে। তিন মাস ধরে এ কাজ চলছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে টিলা কাটা নিষিদ্ধ, এ কথা জানেন কি না—এ প্রশ্নে নিমাদ বলেন, কিছুদিন আগে পুলিশের এক কর্মকর্তাও এসেছিলেন। তিনি দেখে গেছেন। টিলার কাটার কারণ জানানোর পর তিনি আর কিছু না বলে চলে যান। তবে ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে কথা হয় জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওলিরঘাট এলাকায় টিলা কাটার ব্যাপারে কোনো তথ্য কেউ তাঁকে এর আগে জানায়নি। তিনি সেখানে পুলিশও পাঠাননি। টিলা কাটার ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাইলে তিনি করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, টিলা কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।