সেই ১৯৫৮ সাল থেকে

নিউমার্কেটের সবচেয়ে পুরোনো ফটো স্টুডিও ফটো মুভি। বৃহস্পতিবারের ছবি।  সাবিনা ইয়াসমিন
নিউমার্কেটের সবচেয়ে পুরোনো ফটো স্টুডিও ফটো মুভি। বৃহস্পতিবারের ছবি। সাবিনা ইয়াসমিন

বাংলাদেশে একটা সময় বিভিন্ন ফটো স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তোলার চল ছিল মোটামুটি সব মহলেই। পরিবার, বন্ধু কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে তোলা সেসব ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকত নানা ধরনের প্রাকৃতিক দৃশ্য। টেবিলের ওপর শোভা পেত অচল টেলিফোন সেট কিংবা কোথাও রাখা হতো গাড়ির ডামি। স্টুডিওর দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন দৃশ্যে শোভা পেত ফুল লতা–পাতা, পাহাড় কিংবা ঝরনার ছবি। এখন ডিজিটাল দুনিয়ায় সনাতন অনুষঙ্গ ছেড়ে ফটো স্টুডিওগুলোর সাজসজ্জা ও কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।

ঢাকার অন্যতম পুরোনো স্টুডিও নিউমার্কেটের ফটো মুভি অ্যান্ড স্টিলসের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। স্টুডিওটি চলছে ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। সেই ১৯৫৮ সাল থেকে। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য প্রচলিত ফটো স্টুডিওগুলোর মতো এটাও এখন ধুঁকছে।

গত বৃহস্পতিবার কথা হচ্ছিল ফটো মুভি অ্যান্ড স্টিলসের কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। এই পেশার সঙ্গে তাঁর যুক্ততা চার দশকের বেশি সময়। সাদা–কালো যুগে ডার্করুমে কাজ করতে করতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এসেছে। তিনি রোমন্থন করলেন ফেলে আসা সুদিনের কথা। জানালেন এই স্টুডিওর যাত্রা শুরু হয়েছিল আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর হাত ধরে। এখন এর মালিক আনোয়ার হোসেনের ছেলে ইফতেখার হোসেন।

ফটো মুভি অ্যান্ড স্টিলসের অবস্থান নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে বাঁ হাতের দ্বিতীয় সারিতে। জিল্লুর রহমান বললেন, ‘এই স্টুডিওতে এক যুগ আগেও ১৬ জন কর্মচারী কাজ করত। ছিল আলাদা ডার্করুম। ছবি তোলার পর অনেক হাতের কাজ থাকত। তার জন্য ছিল আলাদা লোক। সাদা–কালো ও রঙিন ছবি প্রিন্ট করার জন্য ছিল আলাদা মেশিন, অপারেটর। প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে আধা ঘণ্টা ছিল ছবি ডেলিভারির সময়। এ সময় স্টুডিওর সামনে লম্বা লাইন পড়ে যেত।’

এখন এখানে মূলত পাসপোর্ট, ভিসাসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের ফটো তোলা ও প্রিন্ট করা হয়। জিল্লুর রহমান বললেন, পুরোনো দিনের কথা, ‘দেখা গেল কেউ পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখতে বেরিয়েছেন। ফেরার পথে স্টুডিওতে একটা গ্রুপ ছবি তুলে ফেললেন। দাপ্তরিক কাজের জন্য ছবি তুলতে অনেকে দুপুরে খানিকটা ঘুমিয়ে আসতেন। যাতে একটু সুন্দর দেখা যায়।’

স্টুডিওর ব্যবস্থাপক জাহিদ রিপনের কাছ থেকে জানা যায়, নিউমার্কেটে একসময় ১৫টির মতো স্টুডিও ছিল। এখন টিকে আছে মাত্র দুটি। চালু থাকা পাশের হানসা স্টুডিওটি চালু হয় ১৯৮১ সালে। সব কটি স্টুডিও ছিল একই সারিতে। এখন সেখানে সার সার কাপড়ের দোকান।