শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। ছবিটি বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। ছবিটি বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁরা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। গতকাল সকাল থেকেই এই বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের ফলে মঙ্গলবার বিকেলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। শিক্ষার্থীদের এমন বিক্ষোভের মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। বুধবার সকাল থেকে ক্লাস ও সব ধরনের পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের কক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে প্রক্টর ও বেশ কয়েকজন শিক্ষক সেখানে এসে কর্মচারীদের তালা ভাঙার নির্দেশ দিলে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিলে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে চলে যান। এরপর প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ রয়েছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁরা নারী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে বের হতে দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো পুরুষ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বের হতে দিচ্ছেন না। সন্ধ্যা সাতটায় প্রক্টর সুব্রত কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে চান। আমরা বিষয়টি ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। তিনি আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার না থাকা বিক্ষোভের অন্যতম কারণ। তাঁরা ওই দিন বিভিন্ন আবাসিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিতরণ করা বিশেষ খাবারও বর্জন করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (বিইউডিএস) আয়োজিত আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণের সময় উপাচার্য এস এম ইমামুল হক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা দাবি তোলেন, উপাচার্যকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁদের বাকি পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এমনকি স্বাধীনতা দিবসেও তাদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান ও উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বছরে শুধু বিশেষ এসব দিনেই উপাচার্যের পক্ষ থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, বিশিষ্টজন ও সাংবাদিকদের সম্মানে চা-চক্রের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে ছাত্রদের কখনোই রাখা হয় না। হঠাৎই এ বছর শিক্ষার্থীরা এমন করছে। তাদের না রাখা হলে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না—সকাল থেকেই কিছু শিক্ষার্থী এ ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিল। উপাচার্য বলেন, ‘কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু সেটা স্বাধীনতা দিবসের মতো একটি বিশেষ দিনে তোলা হলো কেন? খুবই ঠুনকো একটা বিষয় নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কী যুক্তি থাকতে পারে?’

শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (বিইউডিএস) অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, যারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চায় না, যারা এভাবে কথা বলে, তাদের আমি কী বলে আখ্যায়িত করব তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তারা স্বাধীনতার পক্ষে বলে তো মনে হয় না। তাদের ব্যবহার রাজাকারের মতোই।’

শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেননি দাবি করে উপাচার্য বলেন, ‌‘শিক্ষার্থীদের আমি কীভাবে রাজাকারের বাচ্চা বলি? বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও তো রয়েছে। আমার কথা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খেপিয়ে তোলা হচ্ছে। এর পেছনে অবশ্যই স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত আছে।’