বন্দী বাবাকে পেতে একাকী সন্তানের আর্তি

সাংবাদিক আজহারুল হকের মুক্তির দাবিতে নবাবগঞ্জে তাঁর স্বজনদের মানববন্ধন।  প্রথম আলো
সাংবাদিক আজহারুল হকের মুক্তির দাবিতে নবাবগঞ্জে তাঁর স্বজনদের মানববন্ধন। প্রথম আলো

‘প্রায় দুই বছর আগে আমার মা মারা যান। এরপর থেকে আমি বাবার সঙ্গে নবাবগঞ্জের কাশিমপুরের ভাড়া বাড়িতে থাকি। ৯ মার্চ আমার বাবাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মিথ্যা মামলায় দোহার থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বাবা কেরানীগঞ্জের কারাগারে বন্দী। এখন আর আমার দিন কাটে না। শুধু বাবার কথা মনে পড়ে। বাবাই তো আমার সব। বাবা ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। আমি আমার নিরপরাধ বাবার মুক্তি চাই।’

কথাগুলো যুগান্তর ও যমুনা টিভির ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আজহারুল হকের একমাত্র সন্তান আরিফা হকের (১৪)। গতকাল বুধবার নবাবগঞ্জের শহীদ মিনার চত্বরে আজহারুল হকের মুক্তির দাবিতে স্বজনদের করা মানববন্ধন চলাকালে আরিফা এসব কথা বলে।

মানববন্ধন চলাকালে আরিফা আরও বলে, ‘আমি নবাবগঞ্জ পাইলট গার্লস হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ছি। বাবা জেলে থাকায় আমি স্কুলে যেতে পারছি না। সামনে পরীক্ষা। আল্লাহই জানেন আমার কী হবে। আমি একা একা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। বাবাকে আমার পাশে থাকা খুব দরকার। আমার বাবাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।’

মানববন্ধন চলাকালে আজহারুল হকের মা বৃদ্ধ রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘মা-হারা একমাত্র নাতনি আরিফার জন্য হলেও আমার ছেলে আজহারুল হকের মুক্তি চাই। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। অথচ তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’ বাবা শেখ হাকিম বলেন, ‘শুনেছি আজহারকে জেলে পাঠানোর পরও তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার ছেলেকে আমাদের মাঝে ফিরে পেতে চাই। আমরা আজহারের মুক্তি দাবি করছি।’

মানববন্ধনে আজহারের ভাবি সুফিয়া বেগম, ছোট ভাই মো. মাজহারসহ পরিবারের ২০-২২ জন সদস্য অংশ নেন।

জানা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. পলাশ বাদী হয়ে দোহার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগান্তর–এর কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি আবু জাফর, একই পত্রিকার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আহজারুল হক, গোপালগঞ্জ সদর থানার সাংবাদিক মো. হ‌ুমায়ূন, ঢাকার ধামরাই উপজেলার সাংবাদিক শামীম খান ও আশুলিয়া থানার মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আবু জাফরকে ২০ ফেব্রুয়ারি দোহার থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ৯ মার্চ আজহারুল হক ও এর কয়েক দিন আগে শামীম খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইতিমধ্যে সাংবাদিক আবু জাফর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান।