আ.লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করছেন। তাঁর বিপক্ষে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরাও মাঠে রয়েছেন। এ কারণে সুবিধায় রয়েছেন দলটির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আনিসুর রহমান।

এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সী দলীয় প্রার্থী। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এ উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ইউপির চেয়ারম্যান আনিসুরের পক্ষে।

দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে এ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মঈনউদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু মহাজোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। এ কারণে মঈনউদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। সে সময় মঈনউদ্দিনের বিরোধিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সী। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতা-কর্মীরা ভালোভাবে নেননি। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখানে আনিসুর রহমান, হানিফ মুন্সী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাসের আহমেদ মনোনয়ন চান। হানিফ মুন্সী মনোনয়ন পান। তাঁর বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ সদর, দুর্গাপুর, লালপুর, শরীফপুর, তালশহর ও তারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরাসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন।

দুর্গাপুর ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আশুগঞ্জ থেকে কেউ সাংসদ হতে পারেননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে উপজেলা থেকে একজন প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় উপজেলার স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আশুগঞ্জের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু হানিফ মুন্সী ও ছফিউল্লাহ মিয়া তাঁর বিরোধিতা করে জাপার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেছেন। এবার তাঁরা আবু নাসের আহমেদ ও আনিসুর রহমান দলীয় মনোনয়নের প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু হানিফ আবারও এর বিরোধিতা করেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, হানিফ মুন্সী চাঞ্চল্যকর পাঁচ খুনের মামলার অন্যতম আসামি। ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর রাতে চরচারতলা গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলামের মা, মেয়ে, জামাতা, নাতি ও বাড়ির নৈশপ্রহরীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চরচারতলা ইউপির চেয়ারম্যান এস এম কাবির ও হানিফ মুন্সীকে আসামি করে মামলা হয়। সেটি বর্তমানে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। সে কারণে এলাকায় হানিফের ভাবমূর্তি ভালো নয়।

শরীফপুর ইউপির চেয়ারম্যান সাইফউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। যিনি যোগ্য তাঁকে আমরা সমর্থন জানিয়েছি।’

তালশহর পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান আবু শ্যামা বলেন, বিতর্কিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। উপজেলার স্বার্থে উপজেলাবাসীর সঙ্গে যিনি একত্র হতে পারেন না, তাঁর কাছে উন্নয়ন আশা করা যায় না। তাই সবাই মিলে যিনি যোগ্য, তাঁর পক্ষেই কাজ করছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হানিফ মুন্সী বলেন, উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নৌকার বিরোধিতা করছেন। তাঁরা নৌকাকে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধিতা করছেন। তবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নৌকার পক্ষে কাজ করছে। আর ওই মামলায় তিনি জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা ও সাড়া পাচ্ছি। মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। জয়ী হয়ে উপজেলার সেবা করতে চাই। আশুগঞ্জকে একটি উন্নত উপজেলায় পরিণত করতে চাই।’

চতুর্থ দফায় আগামী রোববার এ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে।