অর্ধশতাধিক দলিল লেখক ভুয়া সনদধারী

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে ভুয়া সনদ দিয়ে অর্ধশতাধিক দলিল লেখক লাইসেন্স নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই লাইসেন্স দিয়ে তাঁরা দলিল লেখার কাজ করছেন।

কয়েকজন দলিল লেখক ও ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে মোট ২৫২ জন দলিল লেখক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধশতাধিক দলিল লেখক রয়েছেন, যাঁদের এসএসসি পরীক্ষার সনদ ভুয়া। ২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত কোনো সনদ ছাড়াই দলিল লেখক নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু সরকার ২০০৩ সালে দলিল লেখকদের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী একজন দলিল লেখককে ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হবে। বর্তমানে ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে অর্ধশতাধিক দলিল লেখক রয়েছেন, যাঁদের এসএসসি পাসের কোনো সনদ নেই। তাঁরা এসএসসি পরীক্ষার ভুয়া সনদ তৈরি করে দলিল লেখকের লাইসেন্স নিয়েছেন। প্রতিবছরই সাবরেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সনদ নবায়ন করা হয়। দলিল লেখক সমিতির চাঁদার টাকা থেকে সব দলিল লেখকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। অফিসের একজন সহকারী দিয়ে সমিতির চাঁদা আদায় করা হয় জমির ক্রেতার কাছ থেকে।

এই বছরের প্রথম দিকে ভালুকা সাবরেজিস্ট্রার তাঁর কার্যালয়ের দলিল লেখকদের এসএসসি পাসের মূল সনদ চেয়ে লাইসেন্স নবায়নের নির্দেশ দেন। পরে ২০১ জন দলিল লেখক এসএসসি মূল সনদ দিয়ে তাঁদের লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেন। এরপর ভালুকা সাবরেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের একটি তালিকা করে লাইসেন্স নবায়নের জন্য সুপারিশপত্রসহ জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠান। কিন্তু নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যে ৫১ জন দলিল লেখক তাঁদের এসএসসি পরীক্ষার সনদ জমা দেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ৬ মার্চ জেলা রেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের মূল সনদের দুই কপি করে ফটোকপি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ভালুকার ১০৭ জন দলিল লেখক তাঁদের সনদ জমা দেন। ওই ১০৭ জনের মধ্যে ১৫ জন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ দিতে পারেননি। ওই ১৫ জন দলিল লেখকসহ বর্তমানে মোট অর্ধশতাধিক দলিল লেখক ভুয়া লাইসেন্স দিয়েই দলিল লিখে যাচ্ছেন। এসব দলিল লেখক ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে বছরের পর বছর দলিল করে যাচ্ছেন।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ভালুকা সাবরেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, দলিল লেখকদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য তিনি জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর তালিকা পাঠিয়েছেন। লাইসেন্স করা যেসব দলিল লেখক তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি জমা দেননি, তাঁদের নাম ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবীর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সনদপত্রের বিষয়টি তিনি অবগত নন। যদি কোনো দলিল লেখক ভুয়া সনদপত্র দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’