পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিয়ে বাজেট চাই

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব শামসুল আলম। পাশে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।  ছবি: প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব শামসুল আলম। পাশে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

পানি ও পয়োনিষ্কাশনকে পৃথক খাত হিসেবে বিবেচনা করার সময় এসেছে। এই খাতের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ দরকার। এ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হওয়া জরুরি।
গতকাল বুধবার প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬, নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদেরা এসব কথা বলেন। এই বৈঠক আয়োজনে প্রথম আলোকে সহায়তা করে আন্তর্জাতিক এনজিও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ।
অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে (এসডিজি) ব্যবহৃত ভাষা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে গুণগত পার্থক্য আছে। তাতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন হবে কোনো বৈষম্য না করে, কাউকে বাদ না দিয়ে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এসডিজির নতুন সূচকের মাপকাঠি অনুযায়ী দেশের ৪৪ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। আর মৌলিক পয়োনিষ্কাশন সুযোগের বাইরে আছে ৫৩ শতাংশ মানুষ। এসডিজি-৬–এ পানির ক্ষেত্রে গুণগত মান ও পয়োনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থায়নের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব শামসুল আলম বলেন, এসডিজি-৬–এর সঙ্গে অন্যান্য এসডিজির লক্ষ্যমাত্রারও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করতে হবে, বিষয়টি তেমন নয়। উন্নত জীবনের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজগুলো করতে হবে। সংসদে এসডিজি-৬ নিয়ে আলোচনা হলে, বিতর্ক হলে পানি ও পয়োনিষ্কাশন বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়বে। পাশাপাশি এ বিষয়ে কাজের বাস্তবায়নও দ্রুত হবে।
সরকার মাটির ওপরের পানি অর্থাৎ নদীনালা বা জলাশয়ের পানি ব্যবহারের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিন এ খান। তিনি বলেন, এসডিজি–৬–এর পানি ও পয়োনিষ্কাশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। এখন দেশে ব্যবহৃত পানির ৭০ শতাংশ আসে মাটির নিচ থেকে। বর্তমানে যেসব পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার ফলে ২০২১ সালে নদীনালা বা জলাশয়ের পানি ব্যবহৃত হবে ৭০ শতাংশ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম। আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি এইড অ্যাডভোকেসি) মো. লিয়াকত আলী বলেন, এসডিজি–৬ অর্জন করতে হলে সক্ষমতা ও সম্পদ দুই বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণেরও দরকার আছে। যেমন স্কুলের শিক্ষার্থীরা ল্যাট্রিন ভাগাভাগি করে। সে ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ নেই। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে ল্যাট্রিন ভাগাভাগিতে উদ্বেগ দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, নিরাপদ পানি ও মৌলিক পয়োনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের অনেক গুরুত্ব আছে। দেশের ১১ জেলার সাত লাখ মানুষের নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে এইচএসবিসির। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক (করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি) সৈয়দা আফজালুন নেসা বলেন, পানি ও পয়োনিষ্কাশন বিষয়ে ওয়াটারএইডের সঙ্গে তাঁরা কাজ করছেন। অন্যদের সঙ্গেও এইচএসবিসি কাজ করতে চায়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও কাজের অনেক সুযোগ আছে।