রাঘববোয়াল বাদ দিয়ে করতোয়ার দখলদার উচ্ছেদ

বগুড়ার করতোয়া নদীর অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়ার করতোয়া নদীর অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: সোয়েল রানা

নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের নির্দেশের সাড়ে ছয় মাস পর বগুড়ার করতোয়া নদীর অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার পর এ অভিযান শুরু হয়।

আজ সকালে জেলা প্রশাসনের দুই নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অভিযানে নামে। শহরের মালতিনগর এলাকায় ভাটকান্দি সেতুসংলগ্ন নদীর সীমানায় থাকা অবৈধ স্থাপনা এলাকায় উচ্ছেদ শুরু করে। উচ্ছেদের তালিকায় টিএমএসএস, বগুড়া ডায়াবেটিকস হাসপাতালসহ বড় বড় দখলকারীর নাম আছে। তবে শুরুতেই বায়তুল হামদ জামে মসজিদ গুঁড়িয়ে দিতে গেলে তোপের মুখে পড়েন অভিযানকারী দলের সদস্যরা। পরে মুসল্লিদের বাধার মুখে মসজিদ বাদ দিয়ে বগুড়া পৌরসভার পাম্পহাউস গুঁড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সকাল ১০টার দিকে অভিযান শুরু হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম তাজ উদ্দিন ও সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তমাল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। এ সময় পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন পুলিশ ও দমকল বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ছিলেন।

বায়তুল হামদ জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, করতোয়া সীমানায় দখলদারের সংখ্যা কয়েক শ। প্রশাসন মাত্র ৩০ জনের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। এই ৩০ জনের মধ্যে টিএমএসএস, ডায়াবেটিকস হাসপাতালের মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রশাসন প্রথমেই মসজিদ ভেঙে দিতে এসেছে। এ জন্য এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।

করতোয়ার দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান। ছবি: সোয়েল রানা
করতোয়ার দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান। ছবি: সোয়েল রানা

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ দখলদারের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে একদিকে ভাটকান্দি সেতুসংলগ্ন এই জামে মসজিদ, অন্যদিকে টিএমএসএসের প্রধান কার্যালয় রয়েছে। জেলা প্রশাসন ভাটকান্দি সেতু থেকে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাউবো শুধু অভিযানে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। এ অভিযান আজ শুরু হলেও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে।

এর আগে গত রোববার জেলা নদী রক্ষা কমিটির এক সভায় করতোয়া দখলমুক্ত করতে আজ থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম দফায় করতোয়া নদীর অবৈধ ৩০ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আলীমূন রাজীব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক আগেই করতোয়া নদীর ৩০ দখলদারের এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি ওয়েবসাইটে এই দখলদারের তালিকা প্রকাশও করা হয়। সাত দিন সময় বেঁধে দিয়ে দখলদারদের কাছে করতোয়া নদী সীমানা থেকে অবৈধ স্থাপনা নিজে সরিয়ে নিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হয়। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি করতোয়া নদী দখলদারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের এসিল্যান্ডদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তৈরি করা করতোয়া নদী দখলদারের তালিকায় যে ৩০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস), বগুড়া পৌরসভা, শহরের মালতিনগর এলাকার মোহাম্মদ বাদশা, একই এলাকার মোছা. হাজেরা বেওয়া, বাহালুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, লাল মিয়া, বুলু মিয়া, জাকির হোসেন, খলিলুর রহমান, মাটিডালি এলাকার আরিফ হোসেন, নাটাইপাড়ার সাইদুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, মশিউর রহমান, লুৎফর রহমান, আরিফা বেগম, আবুল কাশেম, বজলুর রশিদ, বজলার রহমান, মো. মিল্টন, গৌর দাস, অনীল কর্মকার, গোপাল চন্দ্র দাস, রাধা চন্দ্র দাস, প্রহল্লাদ, বগুড়া ডায়াবেটিকস হাসপাতাল, গোপীনাথ মন্দির এবং সাহেব বাজার বায়তুল হামদ জামে মসজিদ। দখলদারের তালিকায় একাধিক স্থানে নাম রয়েছে টিএমএসএস এবং বগুড়া পৌরসভার। টিএমএসএস করতোয়া নদীর ৪ দশমিক ৯০ একর জায়গা দখল করে ক্যানটিন, ছাত্রাবাস, নার্সারি এবং পুকুর খনন করেছে বলেও জেলা প্রশাসনের প্রকাশ করা তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অবশ্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), করতোয়া নদী বাঁচাও নেটওয়ার্ক, টিআইবি-সনাক, সুজন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ বহু সংগঠন সিএস নকশা অনুযায়ী করতোয়া নদীর অবৈধ দখলদারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান এবং ফৌজদারি মামলা করে আইনের আওতায় এনে গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন করছে।