ব্রিটিশ রাজনীতিকদের নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন

ব্রিটিশ রাজনীতিকদের নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন। ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটিশ রাজনীতিকদের নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন। ছবি: সংগৃহীত

এবার বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেননি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকেরা। বুধবার লন্ডনে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের আয়োজনে উপস্থিত হওয়া ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সবাই বাংলাদেশের এগিয়ে চলার গুণগান গেয়েছেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ট্যারেজ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের এই আয়োজন করে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত ব্রিটিশ রাজনীতিক হাজির হয়েছিলেন এতে। সর্বদলীয় এসব রাজনীতিকদের অনেকেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

কয়েক বছর ধরে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের নিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে এমন আয়োজন করছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। অতীতের আয়োজনগুলোতে বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের কথা বলতে দেখা গেলেও এবার ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এবার কেবলই বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার অভিভূত হওয়ার কথা বলেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্যে ছিল রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা। আর যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের অবদানের কথা। জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছেন বেশ কয়েকজন।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বাংলাদেশবিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির প্রধান অ্যান মেইন বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্য বের হয়ে আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা ভাবছে ব্রিটিশ সরকার। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের এই আইনপ্রণেতা বলেন, কিছুদিন আগেই তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন। চলতি বছরের মধ্যেই আবার যাবেন।

বিরোধী দল লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা জেস ফিলিপস বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তিনি কাজ করছেন বলে জানান। শিগগিরই তাঁর বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা আছে।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এবং কাউন্সিলর সায়মা আহমদ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এতে ভ্যালেরি ভাজ, মাইক গেইফস, টেরি লয়েড, পল স্কালি, জনাথন অ্যাশওয়ার্থসহ বিভিন্ন ব্রিটিশ রাজনীতিক বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশংসা করেন। কেউ কেউ বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে প্রশংসা করেন। লেবার দলের আইনপ্রণেতা টবি লয়েড বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণা করেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশের নানা উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে। বাঙালিরা মুসলিম হলেও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। মৌলিক সেই পার্থক্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কারণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটিশ রাজনীতিকদের এখন নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে; নাকি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে ফিরে যাওয়া সমর্থন করবে।

হাইকমিশনার ব্রিটিশ রাজনীতিকদের উদ্দেশে বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের প্রশংসা করলে চলবে না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে, সেটিই হবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের উপযুক্ত জবাব।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত সবাই সমস্বরে গেয়েছেন জাতীয় সংগীত। ছিল দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা।

ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের হাতে বাংলাদেশে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার পরিসংখ্যানসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার তথ্যসংবলিত প্রকাশনা তুলে দেওয়া হয়।