তার ধরে নামতে চেয়েছিলেন সাজ্জাদ

পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ। ছবি: সংগৃহীত
পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ। ছবি: সংগৃহীত

‘আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বের হতে পারব কি না জানি না। আমার জন্য দোয়া কোরো।’ ডিশ লাইনের তার ধরে নামার আগে এই কথাগুলো ভাইকে ফোন করে বলেছিলেন পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ (৪৬)।

সাজ্জাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বলুগ্রামে। স্ত্রী ফাতেমা ও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া একমাত্র ছেলে সিয়ামকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন তিনি। বৃহস্পতিবার বনানীর অগ্নিকাণ্ডে এফ আর টাওয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর।

নিহত সাজ্জাদের ছোট ভাই পারভেজ খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন লাগার পর ওই ভবনের ১১ তলা থেকে ডিশের কেবল ধরে নামতে গিয়ে আমার ভাই নিচে পড়ে যান। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি এ মাসের ১১ তারিখে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি যান। ২৫ মার্চ ওমরাহ শেষে দেশে ফিরেছেন।’ পারভেজের ভাষ্য, তার বেয়ে সপ্তম তলা পর্যন্ত নেমে যান সাজ্জাদ। এরপর এসির বক্সের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পারভেজ খসরু বলেন, ‘দুপুরে ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। আমাকে ফোন করে বলেন, “ভবনে আগুন লেগেছে, আমার জন্য দোয়া কোরো।” ভাইকে বললাম, ‘আমি কি আসব। আমার কথার আর কোনো উত্তর দিলেন না। ভাইয়ের সঙ্গে ওটাই ছিল আমার শেষ কথা। এই কথা বলার পর তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিকেলে এক লোকের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে তাঁর মৃত্যুর খবর পাই। এরপর বনানীর ১৫ নম্বর রোডে অবস্থিত বনানী ক্লিনিকের বারান্দায় লাশ পড়ে থাকতে দেখি।’

পারভেজ জানান, তাঁর ভাই এফ আর টাওয়ারের ১১ তলায় অবস্থিত কার্গো পরিবহন কোম্পানি স্ক্যান অয়েল লজিস্টিকসের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৫ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ছেলে সিয়াম এ বছর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

পারভেজ জানান, তাঁর সঙ্গে কথা বলার আগে সাজ্জাদ স্ত্রী ফাতেমা বেগমের সঙ্গেও মোবাইল ফোনে শেষবারের জন্য কথা বলেন। ঘটনার সময় সাজ্জাদ জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় আগুন দেখে সবার কাছে দোয়া চেয়ে নেন।

সাজ্জাদের ছেলে সিয়াম বলেন, ‘ওই দিন সকালে বাবা আর আমি দুজন মিলে ভোর পাঁচটার দিকে বাহিরে যাই। বাহির থেকে বাসায় এসে ১০টার দিকে বাবা অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন আর আমি উবারে গাড়ি এনে দিলে সেই গাড়িতে বাবা অফিসে যান। সেই যাওয়াই বাবার শেষ যাওয়া হবে কখনো ভাবিনি। আর কোনো দিন বাবার সঙ্গে ঘুরতে যেতে পারব না।’

শুক্রবার সকাল ১০টায় নিজ গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাজ্জাদের মরদেহ। বলুগ্রামের ষাটোর্ধ্ব কুদ্দুস মৃধা বলেন, ‘সাজ্জাদ একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি খুবই ধার্মিক ও দানশীল ছিলেন। এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ দিয়েছেন।’

বড় ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ধরন বর্ণনা করতে গিয়ে পারভেজ খসরু বললেন, ‘ভাই যেকোনো কাজ করতে গেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করত। মতামত নিত। ভাই আর কোনো দিন কোনো মতামত নেবে না।’ তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ। ঘটনার বর্ণনাদাতা পারভেজ একটি কলেজে চাকরি করেন।