সবাই বেরিয়ে গেলেন, আটকে গেলেন আবীর...

আনজিন সিদ্দিক আবীর। ছবি: সংগৃহীত
আনজিন সিদ্দিক আবীর। ছবি: সংগৃহীত

মা তাসরিমা খানম গ্রাম থেকে ঢাকায় বড় ছেলে তানজির সিদ্দিক তমালের (২৬) বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ছেলের বাসায় যাওয়ার মাত্র দুদিন হলো। মায়ের আগমনে ছোট ছেলে আনজিন সিদ্দিক আবীরের (২৪) বেশ ভালোই সময় কাটছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে মায়ের হাতে ভাত খেয়ে বাসা থেকে অফিসে যান আবীর। সেই খাওয়াই যে জীবনের শেষ খাওয়া হবে তা কে জানত! বৃহস্পতিবার রাজধানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

নিহত আবীরের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পাড়ায়। তাঁরা দুই ভাই। বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক পেশায় ব্যবসায়ী। মা তাসরিমা খানম উপজেলার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আবীর তাঁর বড় ভাই তমালসহ রাজধানীর কল্যাণপুরে একই বাসায় থাকতেন। আবীর পাটগ্রাম টিএন (তারকনার্থ) স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০০৯ সালে এসএসসি ও পরে ঢাকা থেকে এইচএসসি পাস করেন। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করেন। প্রায় দুই বছর আগে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তাঁর অফিস ছিল এফ আর টাওয়ারে ১৬ তলায়। অগ্নিকাণ্ডের পর সহকর্মীরা সবাই বের হতে পারলেও, ভাগ্যের ফেরে আটকে গিয়ে তিনি প্রাণ হারান।

সহকর্মীদের বরাত দিয়ে আবীরের চাচা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের সময় আবীর ওয়াশ রুমে ছিলেন। ওই মুহূর্তে আবীরসহ অফিসে ছিলেন ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আগুন লাগার খবর শুনেই ১৯ জনই তৎক্ষণাৎ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। এ দিকে আবীর ওয়াশ রুশ থেকে বের হয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে পড়েন। সহকর্মী একজনকে মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে পারেন, ভবনে আগুন লেগেছে, তারা সবাই ভবন থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এ সময় আবীর আর্তচিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানান। এর কিছুক্ষণ পর থেকে আবীরের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা আবীরে লাশ উদ্ধার করে ১৩ তলা থেকে।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন স্বজনেরা। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে আবীর মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন স্বজনেরা। চলতি বছরেই তাঁর বিয়ে করার কথা ছিল।

এ দিকে শুক্রবার দুপুরে নিহত আবীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারি আর শোকের মাতম। কিছুক্ষণ পরপর বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক চিৎকার করে ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে ডাকছেন। আর নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।

বিকেল তিনটার দিকে লাশবাহী গাড়ি বাড়িতে পৌঁছালে শোকাহত এলাকার মানুষ শেষ বারের মতো আবীরের মুখখানি দেখতে ভিড় করেন। পরে বাদ আসর পাটগ্রাম সরকারি জসমুউদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজে জানাজা শেষে কলেজ পাড়ায় পারিবারিক কবর স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

আবীরের অকাল মৃত্যুতে পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, পৌর মেয়র সমশের আলী ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল করিমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শোক প্রকাশ করেন এবং শোকাহত পরিবারকে সমবেদনাও জানান।