টাইলস থেকে বিদ্যুৎ!

বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী টাইলসের উদ্ভাবন দলের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন ইউনিনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে।  প্রথম আলো
বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী টাইলসের উদ্ভাবন দলের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন ইউনিনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে। প্রথম আলো

ঘর কিংবা ফুটপাতে বসানো আছে টাইলস। তার ওপর দিয়ে হাঁটাচলার মধ্য দিয়ে উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে জ্বালানো যাবে বাতি। এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২’–এর একটি দল। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইলেকট্রিসিটি জেনারেটিং ফ্লোর টাইলস’। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর গতকাল শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এমন উদ্ভাবন দেশে প্রথম।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই উদ্ভাবনী প্রকল্পের প্রধান গবেষক মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক এস এম ইফতেখার উদ্দিন। গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন মো. রাজু মিয়া, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রমা পাল, ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সজল কান্তি সিনহা, ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস লিলি ও ৪১তম ব্যাচের সুমাইয়া জান্নাত চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার ‘ইলেকট্রিসিটি জেনারেটিং ফ্লোর টাইলস’ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান তৌফিক রহমান চৌধুরী, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শিব প্রসাদ সেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল (সিএসসি) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক এ এস এম ইফতেখার উদ্দিন জানান, দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে অব্যবহৃত শক্তিকে কীভাবে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা যায়, সে চিন্তা থেকেই প্রকল্পটি শুরু করেন তাঁরা। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২–এ ছয় মাস ধরে কাজ করে এই উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে তাঁর দল। তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিশেষ ধরনের ফ্লোর টাইলস উদ্ভাবন করেছি, এগুলো ঘরে কিংবা সড়কের ফুটপাতে বসানো যাবে। এই টাইলসে আমরা চুম্বকীয় আবেশ ব্যবহার করেছি। সঙ্গে আছে বিশেষ ধরনের ব্যাটারি। কেউ যখন টাইলসের ওপর দিয়ে হাঁটবে, তখন তার পায়ের চাপে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। সে বিদ্যুৎ জমা হবে ব্যাটারিতে।’

বিশদ বিবরণ দিয়ে ইফতেখার বলেন, ‘আমরা চার ফুট বাই তিন ফুট আকারের বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী ফ্লোর টাইলস উদ্ভাবন করেছি। এই টাইলসে আটবার পায়ের চাপ পড়লে ২ দশমিক ৪ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এক ঘণ্টায় টাইলসের ওপর ১২০০ বার পায়ের চাপ পড়লে ৪০ ওয়াটের একটি এলইডি বাল্ব সাড়ে ৫ ঘণ্টা জ্বালানো যাবে। চাইলে ফ্যান চালানো কিংবা অন্য কোনো কাজেও উৎপন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব।’

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান তৌফিক রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমানে ‘ইলেকট্রিসিটি জেনারেটিং ফ্লোর টাইলস’ প্রকল্পটি আরও উন্নত করার কাজ করছে উদ্ভাবনকারী দলটি। বাংলাদেশ সরকার চাইলে তাদের সঙ্গেও এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত দলটি।

ইফেতখার উদ্দিন ‘ভাইব্রেশন ড্রাইভেন ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক এনার্জি হার্ভেস্টার’ শীর্ষক আরেকটি উদ্ভাবনী প্রকল্প গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ‘অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)’–এর প্রতিযোগিতা ‘ইনোভ-এ-থোন ২০১৮’ এর মূল পর্বে নির্বাচিত হয়। ওই প্রকল্পটি সরকারি অনুদানে আরও উন্নত করতে কাজ করবেন তিনি।