ইলেকশন না সিলেকশন দ্বন্দ্বে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির নির্বাচন স্থগিত

নির্বাচন (ইলেকশন) নাকি বাছাই (সিলেকশন)—কোন পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে নতুন নেতৃত্ব, তা নিয়ে দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে টিএসসিতে ডুজার কার্যালয়ে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল৷

বহিরাগত লোকজনকে এনে সমিতির সদস্যদের ওপর হামলায় জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে সাত দিনের জন্য নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ৷ সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে এই ঘটনা ও নির্বাচনী কার্যক্রমের বিষয়ে অবহিত করবে কমিশন৷

সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডুজার একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, সমিতিতে মূলত দুটি পক্ষ রয়েছে৷ এক পক্ষে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা, অন্য পক্ষে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ শনিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনাররা ভোট গ্রহণ করতে এলে ডুজার ৪১ জন সদস্যের মধ্যে ২৭ জন সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ৯টি পদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নির্বাচন দাবি করেন। অন্যদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর একটি পক্ষ দাবি করে ‘সিলেকশন’৷ ডুজার নির্বাচনে সাধারণত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং অন্য বিভাগ—এই দুটি পক্ষের অভ্যন্তরীণ সমঝোতার ভিত্তিতে পদ ভাগাভাগি হয়ে থাকে৷

শিক্ষার্থীরা জানান, সাংবাদিক সমিতির বেশির ভাগ সদস্যের মতামত অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার বোরহানুল হক সম্রাট ও অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার রিয়াদুল করিম ও মাহবুব রনি পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নির্বাচনের কথা বললে ১৪ জনের পক্ষটি এর বিরোধিতা করে ক্ষোভ জানায়৷ তাঁদের বক্তব্য ছিল, সমিতির রেওয়াজ অনুযায়ী গ্রুপভিত্তিক নির্বাচনই চান তাঁরা৷ তবে নির্বাচন কমিশনাররা বলেন, এটি কেবল রেওয়াজ বা প্রথা, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনই হওয়ার কথা৷ গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় আসতে পারলে সেটি করা যেত৷ পরে সমঝোতায় আসতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মোট ২০ জনের পক্ষটিকে কিছু সময় দেন তাঁরা৷

এর মধ্যে ১৪ জনের পক্ষটির নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহদী আল মুহতাসিম ও অন্য পক্ষের সদস্য ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফুর রহমানের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে৷ এর সূত্র ধরে ১৪ জনের সেই পক্ষ ও অন্য পক্ষের সদস্যদের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ হয়৷ সংঘর্ষ চলে দুই দফায়৷ ১৪ জনের সেই পক্ষের সঙ্গে সমিতির সদস্য নন, এমন কয়েকজনও যোগ দেন৷ এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন৷

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন সাত দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে চলে যান৷ পরবর্তী কমিটি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কমিটিকেই সংগঠনের কার্যাবলি পরিচালনার দায়িত্ব দেন তাঁরা৷

জানতে চাইলে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আসিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবারের ঘটনায় বাইরে থেকে উসকানি দিয়ে বহিরাগতদের নিয়ে সমিতির সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এই বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই৷’