রুটিরুজির ভাবনাই এখন বড়

এফ আর টাওয়ারের নিরাপত্তারক্ষী সুমন মিয়া। ছবি: প্রথম আলো
এফ আর টাওয়ারের নিরাপত্তারক্ষী সুমন মিয়া। ছবি: প্রথম আলো

সুমন মিয়া (৪৫) এফ আর টাওয়ারের মূল ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন। এই ভবনে যাঁরা আসতেন তাঁদের সালাম ঠুকতেন। কেউ কেউ হাসিমুখে বকশিশ দিতেন, ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করতেন। চেনা মানুষগুলো আর নেই। চোখের সামনে তাঁদের মৃত্যু এক দুঃসহ কষ্টের মধ্যে ফেলেছে সুমনকে। তিনি বলছিলেন, ‘ওই দিনের পর থাইক্যা মুখে ভাত ওঠে নাই। একটা ম্যাডাম ছিল। গাড়ির দরজা খুলে দিতাম। বকশিশ দিত। একটা স্যার অসুস্থ ছিল। রাস্তা পার করে দিয়েছি। ভুলতে পারতেছি না।’

সুমন এফ আর টাওয়ারের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করছেন প্রায় ১০ বছর ধরে। এখন বেতন পান ১০ হাজার টাকা। খুব দ্রুত ভবনে কাজ জোটার আশা নেই। এখন কী করবেন জানেন না।

গত বৃহস্পতিবার বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। আহত হয়ে রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকে। একসময়ের কর্মব্যস্ত এ ভবন এখন পোড়ার কালো দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুমনদের মতো অনেক মানুষের রুটিরুজির উৎস ছিল এ ভবন।

আজ এ ভবনের কাছে সপুরা টাওয়ারে একাধিক তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেয়। সেখানে সাক্ষ্য দেন সুমনও। সাক্ষ্য দেওয়ার পরই সুমন কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। অর্থাভাবে এমনিতেই সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। নতুন করে বিপদে পড়েছেন তিনি। এ মাসের বেতন পাবেন কি না, তারও ঠিক নেই। পরিচিত মুখগুলোর হঠাৎ চলে যাওয়া এক ক্ষত সৃষ্টি করেছে। আবার আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটবে, সেই ভাবনাও বাসা বেঁধেছে মনে।

সমস্যায় পড়েছেন এই ভবনের অন্য অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও।

কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে কাজ করতেন ১ হাজার ৬০০ কর্মী। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক তারিকুল ইসলাম বলছিলেন, বনানীর এফ আর টাওয়ারে তাঁদের মূল অফিস। এই অফিস অচল হওয়ায় গাজীপুরের ফ্যাক্টরি চলছে না। তাঁরা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরিয়ে নিতে চান। কিন্তু অনুমতি পাচ্ছেন না।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ব্যাপারটাও এখানকার অফিস থেকে দেখা হতো।

সাক্ষ্য গ্রহণের পর ডার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব) শরাফত আহমেদ বলছিলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি ফ্লোর আছে এফ আর টাওয়ারে। প্রতিষ্ঠানের কোনো কিছুই তাঁরা বের করতে পারেননি। তিনি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লোকজনের কাছে জানতে চাইছিলেন, তাঁদের কী করণীয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা নিয়াজ আহমেদ বলেন, তাঁরা পুলিশের কাছে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন।

পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে শরাফত আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁচতে তো হবে, অফিসের কাজ তো শুরু করতে হবে। পুলিশ বলছে ফায়ার জানে, ফায়ার বলছে পুলিশ জানে। আমরা কী করব?’