এবার গমের ফলনে কৃষক খুশি

পাবনায় এ বছর গমের ভালো ফলন হয়েছে। হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। গতকাল পাবনা সদরের মালঞ্চী এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
পাবনায় এ বছর গমের ভালো ফলন হয়েছে। হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। গতকাল পাবনা সদরের মালঞ্চী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

এনামুল হকের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের পুণ্ডুরিয়া গ্রামে। তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। গম পেয়েছেন ৯০ মণ, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। ফলে তিনি বেজায় খুশি।

আটঘরিয়া উপজেলার ক্ষিদিরপুর গ্রামের কৃষক মাহাতাব উদ্দিন গম আবাদ করেছিলেন তিন বিঘা জমিতে। তিনি গম পেয়েছেন ৫২ মণ। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রায় ৩৫ হাজার টাকা লাভ করবেন বলে আশা করছেন।

জেলার নয়টি উপজেলাতেই এবার গমের ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, গত বছর ব্লাস্ট রোগে গমের ফলন বিপর্যয় হয়েছিল। এতে গমচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে এবারের ফলনে সে ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।

গতকাল রোববার সরেজমিনে জেলা সদর ও আটঘরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, গাছসহ গমের শিষ পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। সোনালি আভায় ঢেকে আছে মাঠ। কিছু এলাকায় পাকা গম কেটে বাড়িতে নেওয়া শুরু করেছেন কৃষকেরা। জেলা সদরের মালঞ্চিসহ কিছু মাঠে এখনো চলছে গম কাটার কাজ। গম কাটা, শিষ থেকে গম ছাড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষীরা।

স্থানীয় কৃষকদের কয়েকজন জানান, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার গমের ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ গম ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন পর এই দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এবার গমে একটু বেশি লাভ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছিলেন। দুই বিঘার গম কেটে বাড়িতে তুলেছেন। ফলন পেয়েছেন ৩৪ মণ। এরই মধ্যে কিছু গম বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলেছেন। বাকি গম লাভের খাতায় রয়েছে।

মনিদহ গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর লোকসান খাওয়ার পর ইবার ভালো ফলনে আমরা খুশি। বাজারে দামডা ভালো থাকলি পারে লাভ ভালোই হবিনি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় গত বছর ২৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছিল। গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ব্লাস্ট রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গম উৎপাদিত হয়েছিল ৭০ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।

এবার গমের আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ভালো ফলনে উৎপাদন বেড়ে ১ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজাহার আলী বলেন, এবার আবহাওয়া গম উৎপাদনের অনুকূলে ছিল। এ ছাড়া কোনো রোগবালাইয়ের আক্রমণ ঘটেনি। ফলে উৎপাদন ভালো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি গম পাওয়া যাবে।