সাবেক সাংসদ রানার জামিন বহাল, তবে মুক্তি মিলছে না

আমানুর রহমান খান
আমানুর রহমান খান

আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রয়েছে। ওই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আজ সোমবার খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

ওই মামলায় গত ১৪ মার্চ হাইকোর্ট আমানুর রহমানকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এর শুনানি নিয়ে গত ২৫ মার্চ চেম্বার আদালত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও মুনসুরুল হক চৌধুরী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ ও এম আতাউল গনি।

পরে এম আতাউল গনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সালের ৮ মে আপিল বিভাগ এক আদেশে কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় মুলতবি ছাড়া ছয় মাসের মধ্যে ওই মামলার বিচার শেষ করতে বলেছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট অপর এক আদেশে ছয় মাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে বলেন, অন্যথায় আমানুর রহমান জামিন আবেদন করলে তা আইনগতভাবে বিবেচনা করতে বিচারিক আদালতকে বলা হয়। অথচ দুই বছরেও বিচার শেষ হয়নি এবং আমানুর রহমান আড়াই বছর ধরে কারাগারে আছেন। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ হওয়ায় আমানুর রহমান খানকে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের জামিন বহাল রইল জানিয়ে এম আতাউল গনি বলেন, যুবলীগের দুই নেতা হত্যার অভিযোগে করা অপর মামলায় রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন এখন স্থগিত আছে। এ কারণে কাশিমপুর কারাগারে থাকা আমানুর এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না।

ফারুক আহমেদকে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আমানুর, তাঁর তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আমানুর। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

আইনজীবী সূত্র বলছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই টাঙ্গাইল শহরে এসে নিখোঁজ হন। পরদিন শামীমের মা এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজ মামুনের বাবা ২০১৩ সালের ৯ জুলাই আদালতে হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় তিন আসামি জবানবন্দি দেন, যার ভাষ্য, এ বিষয়ে সাংসদ রানা অবগত ছিলেন। এই মামলায় রানাকে গত বছরের ৩ মে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ওই মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আমানুর রহমান, যার শুনানি নিয়ে গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যার শুনানি নিয়ে গত ১৪ মার্চ চেম্বার আদালত ওই জামিন চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়।