এবারও বাবার কোলে চড়ে পরীক্ষায় নাইছ

সাধ আছে, সাধ্য নেই। তবে মনোবলের কমতি নেই। রয়েছে তাঁর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবল বাসনা। তাই এবারও বাবার কোলে চড়ে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। এর আগেও তিনি জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাফল্য লাভ করেছেন।

তাঁর নাম নাইছ খাতুন ওরফে হাসি। বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামে। বাবার নাম নজরুল ইসলাম।

নাইছ খাতুন এ বছর উপজেলার বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তিনি জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। দূর থেকে তাঁকে প্রতিবন্ধী বোঝার উপায় নেই। তাঁর দুই পা আছে, তবে কোনো শক্তি নেই। তাই দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারেন না। তাঁর ডান হাতটিও কাজ করে না। শুধু বসে থেকে বাঁ হাত দিয়ে কলম ধরে লিখতে পারেন। বাবা ও মায়ের কোলে চড়ে লেখাপড়ার জন্য আসতে হয়েছে বিদ্যালয়ে। মনোবল আর বাঁ হাতের শক্তি দিয়ে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতেই এর আগে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় বসেন। কৃতকার্য হন তিনি।

নাইছের মা আকতার জাহান বলেন, তিনি ১৩ বছর ধরে প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার রাস্তা মেয়েকে কোলে নিয়ে বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়েছেন। এর আগের পরীক্ষাগুলোতে তাঁর মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। তাই সব দুঃখ ভুলে গেছেন তিনি। তাঁর মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য আরও কষ্ট করতে চান।

নাইছের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। সেই আগ্রহেই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে সে।’

নাইছ খাতুন বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, শরীরে শক্তি নেই, তাই কী! অদম্য ইচ্ছা আর একটি হাতের শক্তি নিয়েই শিক্ষাজীবন শুরু করেছেন তিনি। কারও মাথায় বোঝা হয়ে থাকতে চান না তিনি। লেখাপড়া শিখে তিনি ভবিষ্যতে আদর্শ শিক্ষক হতে চান।

বহালগাছা-বিশ্বহরীগাছা মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী নাইছ খাতুনকে তাঁর কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় বসার জন্য। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ টি আই এম নুরুন্নবী তারিক বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইছ খাতুনের জন্য বিধিমোতাবেক পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ রয়েছে।