বেড়েছে অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জাম বিক্রি

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। নবাবপুর থেকে তোলা।  ছবি: সাইফুল ইসলাম
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। নবাবপুর থেকে তোলা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
>

* গত এক সপ্তাহে দোকানের পণ্য বিক্রি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে
* ক্রেতারা বাড়ি, অফিস, গুদাম, দোকানের জন্য সরঞ্জাম কিনতে আসছেন

নগরে কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের বিক্রি বেড়ে গেছে। পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা, বনানীর এফ আর টাওয়ার ও গুলশানের কাঁচাবাজারে আগুন লাগার পর ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে মানুষকে ব্যক্তিগত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বাড়ির জন্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কিনতে দেখা গেছে। 

গতকাল সোমবার গুলিস্তান ও পুরান ঢাকা নবাবপুর রোডের বেশ কিছু দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, অগ্নিনির্বাপণ ও নিরাপত্তার সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে তাঁদের দোকানের পণ্য বিক্রি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ক্রেতারা বাড়ি, অফিস, গুদাম, দোকানের জন্য সরঞ্জাম কিনতে আসছেন। ক্রেতারা বেশি কিনছেন আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা অগ্নিনিরাপত্তার নির্দেশনা থাকে। সে অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারপর ব্যবহারকারীরা নিজেরা সেসব সরঞ্জাম কেনেন। গ্রাহকেরা আগুন নেভানো ও নিরাপত্তার বিষয়ে পরামর্শ চাইলে সেসব ফায়ার সার্ভিস থেকে দেওয়া হয়।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ২৬ জন। সর্বশেষ গত শনিবার ভোরে গুলশান ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ২১১টি দোকান।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনে বা কক্ষে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম বেশি বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত রাসায়নিক পাউডার এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিক্রি বেশি হচ্ছে। এগুলো তিন থেকে পাঁচ কেজির সিলিন্ডারে করে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ধোঁয়া থেকে বাঁচতে অক্সিজেন মাস্ক বিক্রি হয়। পানি দিতে হোস পাইপ বা রিল, ফায়ার বল, বালতি, আগুনের সতর্কতামূলক সাইরেন, ধোঁয়ার অ্যালার্ম, কম্বল, নিরাপত্তা বেল্ট, চশমা, মাথার হেলমেটসহ আগুন নেভানোর সরঞ্জামের বিক্রি বেড়েছে। অনেকে আবার পুরোনো সিলিন্ডার পুনরায় ভরাতে নিয়ে আসছেন।

নবাবপুর রোডের সেভ অ্যান্ড সেফটি নামের দোকানের বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, গত তিন-চার দিনে তাঁর দোকানে অগ্নিনির্বাপণ রাসায়নিকের সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে প্রায় এক হাজারটি। আগে তিন সপ্তাহেও এতসংখ্যক সিলিন্ডার বিক্রি হতো না। মান ও কেজিভেদে সিলিন্ডারের দাম ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।
আগুন লাগার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তিত অনেকে। নবাবপুর রোডে অক্সিজেন মাস্ক ও রেসকিউ কিটের খোঁজে এসেছেন বেসরকারি একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত মো. জহির ও মো. আফজাল।

মো. জহির বলেন, ‘বহুতল ভবনে আমাদের কাজ। সেখানে যদি আগুন লাগে তবে লিফট ব্যবহার করতে পারব না। সে ক্ষেত্রে সিঁড়ি দিয়ে বের হতে গিয়ে ধোঁয়া থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করা যায়। আর ভবন থেকে নামতে গেলে সেফটি কিট ব্যবহার করে বের হতে পারব। সেই সচেতনতা থেকেই কিনতে এসেছি।’
আরেক দোকানি বলেন, আগে কারখানা বা অফিসের জন্য এসব সামগ্রী বেশি কেনা হতো। বাসাবাড়ির মানুষ তেমন আগুন নেভানোর সরঞ্জাম কিনত না। এখন কিনছে।

বনানীর আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ভবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব কিনছেন অনেকে। আল আমিন ট্রেড সিন্ডিকেট নামের দোকানের ম্যানেজার কবির হোসেন বলেন, আগুন লাগার পর প্রথম কয়েক দিন মানুষের ভয় থাকে, সচেতনতা বেশি থাকে। তাই তাঁরা কিছুটা সচেতন
হন। প্রথম প্রথম কিনতে আসেন। এখন সরকারিভাবেও এসব সরঞ্জাম কেনার জন্য চাপ আছে। আগে ফ্ল্যাটবাড়ি ও বাসাবাড়ি থেকেও কিনতে আসত না। এখন আসছে।

বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের দুজন দোকানি গেছেন নবাবপুর রোডের এসব দোকানে। তাঁরা তিনটি অগ্নিনির্বাপণ ও কার্বন ডাই–অক্সাইডের মোট ছয়টি সিলিন্ডার কিনেছেন। তাঁদের একজন আবদুল আজিজ বলেন, মার্কেটের নিজস্ব আগুন নেভানোর ব্যবস্থা থাকলেও তাঁদের নিজেদের দোকানের জন্য কোনো সরঞ্জাম ছিল না। এবার দোকানের জন্য কিনেছেন।

আর ঢাকা ট্রেড সেন্টারের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে আশিকুল ইসলাম ও সোহরাব হোসেন মার্কেটের জন্য পুনরায় আগুন নেভানোর সরঞ্জাম কিনতে এসেছেন। তাঁরা ২৮টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার কিনেছেন। পুরো মার্কেটের জন্য এবার তাঁদের প্রায় এক শ সিলিন্ডার হবে। এগুলো ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ আছে বলেও তাঁরা জানান।