১৩৫ উপজেলায় নৌকার হার

>
নৌকা
নৌকা

*মন্ত্রী-সাংসদদের অনেকে বিদ্রোহীদের পক্ষে ছিলেন
*জয়ী ১৩৫ চেয়ারম্যানের প্রায় সবাই আ. লীগের বিদ্রোহী
*সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে না পারার অভিযোগ
*বিদ্রোহীদের বেশি জয়ের কারণ দলীয় কোন্দলও

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন মাসের মধ্যে দেশের ১৩৫টি উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা হেরেছেন। অথচ ভোটের মাঠে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো ছিল না। অনেকটা একতরফা এই নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ওই উপজেলাগুলোতে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

গত ১০ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চার ধাপে দেশের ৪৪৫টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট হয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অল্প কয়েকজন বাদে ১৩৫টি উপজেলায় জয়ী চেয়ারম্যানদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। সুনামগঞ্জ, বান্দরবান ও টাঙ্গাইলের একটি করে উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী এবং পাবর্ত্য তিন জেলার কয়েকটি উপজেলায় আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন, সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে না পারা এবং দলীয় কোন্দলের কারণে মূলত বিদ্রোহী প্রার্থীরা বেশি সংখ্যায় জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সাংসদের অনেকেও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছিলেন। তাঁদের দাবি, অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তুলনায় এবারের উপজেলা নির্বাচন তুলনামূলক সুষ্ঠু হয়েছে। এ কারণে অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ভেতরে যে কোন্দল ও কলহ রয়েছে, ভোটের এই ফল সেটিই নির্দেশ করে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর মানুষের মধ্যে একটি ধারণা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকারে যাকে চাইবে তিনিই জিতবেন, যে কারণে উপজেলার ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। এটি গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ৪৪৫টি উপজেলার মধ্যে ১০৭টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। সব মিলিয়ে চার ধাপে আওয়ামী লীগ থেকে ৩০৪ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন ১৩৫ উপজেলায় (জাতীয় পার্টি ৩টি ও জেপির এক প্রার্থীসহ)। একটি উপজেলায় ভোটের ফল স্থগিত আছে। গোপালগঞ্জের ৫টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। সেখানে সবাই ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ময়মনসিংহের ৮টি উপজেলার মধ্যে ৬টিতেই জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। খুলনার ৮টি উপজেলার মধ্যে ৬টিতে ভোট হয়। এর মধ্যে ৪টিতে বিদ্রোহীদের কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের ৩টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও ১টিতে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা, কুমিল্লায় ৬টির মধ্যে ২টিতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫টির মধ্যে ২টিতে, মুন্সিগঞ্জের ৬টির মধ্যে ২টিতে, পটুয়াখালীর ৭টির মধ্যে ১টিতে, ভোলার ২টি উপজেলার ১টিতে ও ঢাকার ৫টি উপজেলার ১টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

এর আগে তৃতীয় ধাপে লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলার ৩টিতেই নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ধরাশায়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কক্সবাজারের ৪টি উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন দলীয় প্রার্থীরা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নৌকা প্রতীকের পক্ষে দলের বহু নেতা-কর্মী কাজ করেননি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এরপর বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হবে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ ধাপে যেসব উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়েছে, সেসব উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। চতুর্থ ধাপেই সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। এর আগে প্রথম ধাপে ৪৩ দশমিক ৩২, দ্বিতীয় ধাপে ৪১ দশমিক ২৫ এবং তৃতীয় ধাপে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছিল।