বিএনপি-জামায়াতের ভোট ও টাকার কাছে হার?

কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। এ দুই প্রার্থীর দাবি, প্রতিপক্ষের টাকা ছিটানো, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ভোট এবং প্রশাসনের কারণে তাঁরা পরাজিত হয়েছেন।

গত রোববার কুমিল্লার সাতটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। নানা অনিয়মের অভিযোগে তিতাসে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বাকি পাঁচটির মধ্যে চারটির ফল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। তাঁরা হলেন হোমনায় রেহানা বেগম ও মুরাদনগরে আহসানুল আলম। বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আবুল হাসেম খান দলীয় প্রার্থী হিসেবে লড়ে পরাজিত হন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে হারেন। এ দুটির মধ্যে বুড়িচংয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আখলাক হায়দার ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ আবু তাহের জয়ী হন।

এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৫ আসনের সাংসদ আবদুল মতিন খসরু। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় যাঁরা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। এ কারণে এখানে আওয়ামী লীগের লোকই চেয়ারম্যান।

দলীয় নেতাদের ভাষ্য, তিন মাস আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে এ দুই উপজেলায় নৌকা প্রতীক ভোট পেয়েছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৫৪৭টি। তিন মাসের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীরা ভোট পেলেন ৬৪ হাজার ৭৭৩টি। এবার দুই উপজেলা মিলিয়ে ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৭৪ ভোট কম পেয়েছে আওয়ামী লীগ।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুড়িচংয়ের ৯টি ইউনিয়নের ৭৪টি কেন্দ্রে ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৮৮১ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখলাক হায়দার পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৪৩৭ ভোট। আওয়ামী লীগের আবুল হাসেম খান পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৮৪৫ ভোট। অপর প্রার্থী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের গোলাম বায়েজীদ পেয়েছেন ২১৮ ভোট। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯০টি। ৩৪ হাজার ৫৯২ ভোটের ব্যবধানে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাসেম খান হেরেছেন।

জানতে চাইলে আবুল হাসেম খান বলেন, প্রশাসন রাতের বেলায় ভোট ঠেকাতে পারেনি। ময়নামতি ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নে রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়েছে। প্রশাসন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি। আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুল মতিন খসরু স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী টাকা ছিটিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন। অন্যান্য উপজেলার ভোটের ব্যবধান আর বুড়িচংয়ের ভোটের ব্যবধান দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এখানে কেমন নির্বাচন হয়েছে।

তবে আখলাক হায়দার বলেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনারস প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। পরাজিত প্রার্থী অনেক কথাই বলতে পারেন।

ব্রাহ্মণপাড়ার ৮টি ইউনিয়নের ৫৬টি কেন্দ্রে ভোটারসংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজার ১৬৩। এর মধ্যে ভোট দেন ৬৫ হাজার ৬০১ জন। বিদ্রোহী প্রার্থী মুহাম্মদ আবু তাহের পেয়েছেন ৪০ হাজার ৬৭৩ ভোট। নৌকা প্রতীকের জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী পেয়েছেন ২৪ হাজার ৯২৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহের ১৫ হাজার ৭৪৫ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, টাকার কাছে হেরেছে নৌকা। টাকা দিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের লোকদের ভোটকেন্দ্রে আনেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কাজ করেছেন। কিন্তু ফল হয়নি। মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ‘প্রতিটি ভোট ব্রাহ্মণপাড়ার ভোটারদের দেওয়া। সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কারণে দলমত-নির্বিশেষে ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়েছেন। এটা ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর জয়।’