মনোনয়ন সঠিক না হওয়ায় 'বিদ্রোহী'দের জয়জয়কার

চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ময়মনসিংহে আটটি উপজেলার ছয়টিতেই জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দুটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন না দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের এই ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা।

ময়মনসিংহের ১০টি উপজেলা পরিষদে গত রোববার ভোট গ্রহণ হয়। এর মধ্যে সদর ও ফুলবাড়িয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা ভোটে আগেই নির্বাচিত হওয়ায় ওই দুই উপজেলায় শুধু ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়। বাকি আটটি উপজেলার মধ্যে হালুয়াঘাটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদুল হক ও ঈশ্বরগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান নির্বাচিত হন।

ধোবাউড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ডেভিড চিসিম রানা, ফুলপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আতাউল করিম, গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোফাজ্জল হোসেন খান, নান্দাইলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হাসান মাহমুদ, মুক্তাগাছায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদুল হাই আকন্দ ও ভালুকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পর বেশির ভাগ উপজেলায় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন অনেক নেতা-কর্মী। নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীরা অংশ নিলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন।

হালুয়াঘাট উপজেলায় তৃণমূলের ভোটে শীর্ষ স্থানে থাকা প্রার্থী মাহমুদুল হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়। নেতা-কর্মীরা এই প্রার্থীকে মেনে নেন। তবে হালুয়াঘাটে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কবিরুল ইসলাম বেগ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। এখানে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বড় ব্যবধানে জয়ী হন। ঈশ্বরগঞ্জে বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুল আলমের চেয়ে ১২ হাজার ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান জয়ী হন। ধোবাউড়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষের কারণে এই উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হন চারজন। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ডেভিট রানা চিসিম জয়ী হন। ডেভিড ধোবাউড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন অপর বিদ্রোহী প্রার্থী মজনু মৃধা। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তৃতীয় অবস্থানে আছেন।

ফুলপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী আতাউল করিম আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে ৪৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ও গোপনে দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করেছেন।

গৌরীপুরেও জয় পেয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন খান। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। এই উপজেলায় অপর বিদ্রোহী প্রার্থী আলী আহাম্মদ খান পাঠান ভোটের হিসাবে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিধু ভূষণ দাস তৃতীয় অবস্থানে। মুক্তাগাছায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিল্লাল হোসেন সরকারকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হাই আকন্দ। ভালুকায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মোস্তফাকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। নান্দাইলে দলীয় প্রার্থী আবদুল মালেক চৌধুরীকে পরাজিত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মাহমুদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, সঠিক ব্যক্তি মনোনয়ন না পাওয়ায় মূলত দলের এই ভরাডুবি হয়েছে।

ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত ওসমান বলেন, নির্বাচনের আগেই মনোনয়ন নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। এ কারণেই দলীয় প্রার্থীর এই পরাজয়।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম বলেন, ‘এ নির্বাচন ছিল আওয়ামী লীগের নিরীক্ষা। এই নিরীক্ষা ভবিষ্যতে দলের জন্য বার্তা। এই অভিজ্ঞতা আমাদের মেনে ভবিষ্যতে দল গোছাতে হবে।’