আরডিএর সাবেক মহাপরিচালকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা

সরকারের ২ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এম এ মতিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বগুড়ার সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম জেলার শেরপুর থানায় এই মামলা করেন।

একাডেমির ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্পের অনিয়মের কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অন্য আসামিরা হলেন একাডেমির পরিচালক (সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা) ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহমুদ হোসেন খান, পরিচালক (প্রকল্প পরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ) নজরুল ইসলাম খান, উপপ্রকল্প পরিচালক (বাস্তবায়ন) মো. আবিদ হোসেন মৃধা, সহকারী প্রকল্প পরিচালক (পরিবীক্ষণ) শেখ শাহরিয়ার মোহাম্মাদ, সহকারী পরিচালক (ভৌত অবকাঠামো) মো. আরিফ হোসেন ওরফে জুয়েল ও প্রকল্পের হিসাবরক্ষক রুনিয়া ইয়াসমিন।

আসামিদের মধ্যে এম এ মতিন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) রয়েছেন। পল্লী জনপদ প্রকল্পের পরিচালক মাহমুদ হোসেন খান আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন। আরিফ হোসেন জাপানে রয়েছেন উচ্চতর শিক্ষার জন্য।

এম এ মতিন গত আট বছর আরডিএর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ পদে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার তিনজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিলেও কেউ যোগ দিতে পারেননি। উপসচিব পদমর্যাদার নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এম এ মতিন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের (ডিজি) পদে চাকরি করেন। সূত্রমতে, আইন অনুযায়ী একজন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে বগুড়ায় অবস্থিত পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক পদে রাখার সুযোগ নেই।

‘পল্লী জনপদ’ হলো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প। দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে ৪২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাজশাহী বিভাগের জন্য বগুড়ার শাজাহানপুর, খুলনার রূপসা, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, রংপুরের গঙ্গাচড়া, ঢাকার গোপালগঞ্জ এবং বরিশালে সরকারি বিধিমতে জমি অধিগ্রহণ করা কথা। কিন্তু গোপালগঞ্জ বাদে অন্য কোনো এলাকায় সরকারি বিধি অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি।

পল্লী জনপদ প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ বাবদ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জমি অধিগ্রহণ খাতে দেওয়া হয় ২৩ কোটি সাড়ে ১০ লাখ টাকা। পরের অর্থ বছরে দেওয়া আরও ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা দেওয়া হয় বগুড়া আরডিএর সোনালী ব্যাংক শাখার অ্যাকাউন্টে। এই অ্যাকাউন্ট আসামি মো. মাহমুদ হোসেন খান প্রকল্প পরিচালক হিসেবে একক স্বাক্ষরে পরিচালনা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রকল্পের জন্য ৩ দশমিক ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা থাকলেও ৫ দশমিক ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ দেখানো হয়। এর বিপরীতে ২৪টি কবলা দলিল সম্পাদন করা হয়। জমি কেনা হয় বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর মৌজায়। ৫ দশমিক ৬৭ একর জমি ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকায় কেনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই জমি ক্রয়ে প্রকল্প পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও হিসাবরক্ষক ওই ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করেন।

দুদক বলছে, মতিনের বিরুদ্ধে গত বছর অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই বছরেই অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর বগুড়ার আরডিএর কেনা জমির মূল্য নির্ধারণের (অধিগ্রহণ নিয়ম অনুযায়ী) জন্য জেলা প্রশাসন শাখায় যোগাযোগ করা হয়। জেলা প্রশাসকের মতে, আরডিএর কেনা জমির অধিগ্রহণ মূল্য ৫ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৯ টাকা। এই জমি ক্রয়ের জন্য কোনো অধিগ্রহণপ্রক্রিয়া মানা হয়নি। আসামিরা যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অর্পিত ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁরা ইচ্ছামাফিক কবলা দলিল নিবন্ধন করে সরকারের ২ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার ৯২২ টাকা ক্ষতি করেছেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, এই জমি কেনার ঘটনায় প্রতি শতকের মূল্য দেখানো হয়েছে অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতি শতকের জন্য বিক্রেতাদের দেওয়া হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

প্রকল্প পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি ঠিক না। আশপাশের মৌজার জমির দামের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করেই জমি কেনা হয়েছে। জমির মালিকদের কথার ভিত্তি নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আরডিএর সাবেক পরিচালক এম এ মতিন বলেন, ‘মামলার বিষয়টি এখনো জানি না। এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এটি আদালতের মাধ্যমে ফেস করতে হবে।’

এর আগে ২১ মার্চ কয়েক হাজার কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এম এ মতিন ও তাঁর স্ত্রী সাবিনা আফরোজের সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। এই সম্পদবিবরণী এখনো জমা দেননি তাঁরা। গতকাল সোমবার তাঁরা সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার জন্য আরও সাত দিন সময় চেয়েছেন। মতিনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সাবিনা আফরোজের (গৃহিণী) নামেও ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যাংকে অনেক অর্থ রয়েছে বলে জানায় দুদক।