বগুড়ায় বিএনপির সভায় হট্টগোল, হাতাহাতি

বগুড়া জেলা বিএনপির সভার বাইরে নেতা–কর্মীরা। ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়া জেলা বিএনপির সভার বাইরে নেতা–কর্মীরা। ছবি: সোয়েল রানা

কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে হট্টগোল, হইচই আর হাতাহাতিতে মধ্য দিয়ে বগুড়ায় বিএনপির প্রতিনিধি সভা (বর্ধিত সভা) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কের টিএমএসএস মহিলা মার্কেট মিলনায়তনে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার শুরুতে জেলা বিএনপির সদস্য ছাড়া অন্যদের সভাস্থল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে মিলনায়তনের বাইরে যুবদলের কর্মী সমর্থকেরা হইচই ও হট্টগোল শুরু করেন। জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমকে সভাস্থল থেকে বের করে দিলে একপর্যায়ে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা হট্টগোল ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতেই জেলা যুবদলের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার এবং জেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বিতণ্ডায় জড়ান। পরে সভার প্রধান অতিথি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি বরকতুল্লাহ বুলু দুই নেতাকে থামিয়ে দিয়ে যুবদলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো স্লোগান শুনতে এখানে আসিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে জেলা বিএনপির এই বর্ধিত সভায় এসেছি। এখানে জেলা বিএনপির সদস্য ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবে না। যুবদলের কোন কথা থাকলে সেটা সভা শেষে শুনব।’

জেলা যুবদলের সভাপতি-সম্পাদকের উদ্দেশ্যে বরকতউল্লাহ বলেন, যুবদলের কারণে সভা বিঘ্নিত হলে সভাপতি ও সম্পাদক দায়ী থাকবেন। তাঁদের দায়িত্ব নেতা–কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা। এ সময় জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার মিলনায়তনে বাইরে গিয়ে নেতা–কর্মীদের স্লোগান বন্ধ করে সেখান থেকে সরে যেতে বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে বর্ধিত সভা শুরু হলেও প্রথম পর্বে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি বরকতুল্লাহ বুলু এবং দলের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস দুলু ছাড়া অন্য কোনো নেতাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় দুই নেতার বক্তব্যের পর সাংবদিকদেরও সভাস্থল থেকে বের করে দিয়ে জেলা বিএনপির সদস্যদের নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করা হয়।

সভার প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু বলেন, বগুড়ার মাটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বাড়ি। বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি ছিল। সত্যিকার অর্থে ঘাঁটি আজ ম্রিয়মাণ, ফাটল ধরেছে। আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগ বগুড়ায় জায়গা করে নিচ্ছে। বগুড়ায় বিএনপিকে আগের অবস্থায় ফিরে আনতে হবে, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবব্ধভাবে কাজ করতে হবে।

জেলা সভার প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বরকতউল্লাহ ও রহুল কুদ্দুস তালুকদার। ছবি: সোয়েল রানা
জেলা সভার প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বরকতউল্লাহ ও রহুল কুদ্দুস তালুকদার। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির রাজধানী বগুড়া। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই বগুড়া ছাড়াও পাবনা এবং নাটোর জেলা বিএনপির সস্মেলনের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসব জেলা কমিটি পুর্ণগঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে বগুড়াসহ এই তিন জেলা কমিটি পুর্ণগঠন করা হবে। ১২ বছর ধরে যাঁরা আওয়ামী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, হামলা-মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, নতুন কমিটিতে সেসব ত্যাগী ও সাহসী নেতা–কর্মীকে মূল্যায়ন করা হবে।

সভার শুরুতে হট্টগোলের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বরকতুল্লাহ বলেন, কোন হট্রগোল-হাতাহাতি হয়নি। সভাকক্ষের বাইরে যুবদলের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে নিষেধ করার পর তাঁরা স্লোগান বন্ধ করেন। বগুড়া এখনো বিএনপির শক্ত ঘাঁটি দাবি করে এই নেতা বলেন, আজকের সভার পর নেতা–কর্মীরা উজ্জীবিত। ঘাঁটিতে ফাটল ধরেনি, অচিরেই বগুড়া বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে।