ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৩

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ছাত্রলীগের ১৩ কর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৬ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি একনলা বন্দুক ও ১২৬টি গুলি উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার থেকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চার দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, সংঘর্ষে জড়ানো দুটি পক্ষ হলো বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি)। দুটি পক্ষই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এ নিয়ে গত এক বছরে অন্তত ১৮ বার মারামারিতে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে 

গতকাল বিকেলে বিজয়ের এক কর্মীর সঙ্গে সিএফসির এক কর্মীর হাতাহাতি হয়। এ ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিজয় সোহরাওয়ার্দী হল ও সিএফসি শাহ আমানতের সামনে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ ও প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হল তল্লাশি করে দুটি বন্দুক ও ১২৫টি গুলি উদ্ধার করেন।

এদিকে আজ বিকেলে বিজয়পক্ষের কর্মী মোহাম্মদ আবুবক্করকে শহীদ আবদুর রব হলের মাঠে মারধর করেন সিএফসিপক্ষের নেতা-কর্মীরা। মারধরের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিজয়ের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নেন। পরে সিএফসিপক্ষের নেত-কর্মীরাও শাহ আমানত হলের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে দুই পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে কাচের বোতল ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি করে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ কর্মী আহত হন। পরে পুলিশ দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া দুই পক্ষের ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। আটক কর্মীরা হলেন বিজয়পক্ষের ইয়াসিন আরাফাত, বেলাল হোসেন ও অমিত রায়। সিএফসিপক্ষের খালেদ মাসুদ, সিফাতুল সরকার ও সাকিব হাসান।

আহত কর্মীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, আহত চারজনের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

যা বললেন তাঁরা
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিলুপ্ত কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক ও বিজয়পক্ষের নেতা মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার দিন এমদাদুল হককে সিএফসির নেতা-কর্মীরা মারধর করেন। প্রথম আলোতে এমদাদুলকে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় সংবাদ প্রকাশের পর ক্যাম্পাসে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই সিএফসি আমাদের এক কর্মীকে মারধর করেছে। পরে অনর্থক ঝামেলা করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘হা হা প্রতিক্রিয়া’ বিষয়টি গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি ও সিএফসিপক্ষের নেতা রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মহল পরিকল্পিতভাবে মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সম্মান ক্ষুণ্ন করতে কাজ করছে। বিজয় ও সিএফসির কিছু নেতাকে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এমদাদুল হকের ঘটনার সঙ্গে এই সংঘর্ষের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হেলাল উদ্দিন আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১২টা থেকে আজ ভোররাত পর্যন্ত শাহ আমানত, সোহরাওয়ার্দী, আলাওল, এফ রহমান, আবদুর রব হলে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি করে আলাওল হলের পেছন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি শান্ত।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।