আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর 'প্রতিশোধের জয়'

আবদুল হক
আবদুল হক

২০১৪ সালে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবদুল হক আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদ ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ওই নির্বাচনে হারিয়ে দেন। এবার তাই আর তিনি দলীয় মনোনয়ন চাননি। ভোটারদের ওপর ভরসা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।

পাঁচ বছর পর এবার জয় পেয়েছেন আবদুল হক। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মুইদুল ইসলামকে হারিয়ে তিনি নির্বাচিত হন। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে ৩৫ হাজার ৮৬৮ ভোট পান। আর মুইদুল ইসলাম পান ২৮ হাজার ২৯৪ ভোট।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেছারাবাদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মুইদুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পান। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফুয়াদ। এস এম ফুয়াদের অনুসারীরা এস এম মুইদুল ইসলামের বিরোধিতা করেন। তা ছাড়া মুইদুল বর্তমান সাংসদ ও গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারীরা মুইদুল ইসলামকে হারাতে গোপনে তৎপর ছিলেন। এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে ও ভোটার সমর্থন পেয়ে আবদুল হক জয়ী হয়েছেন।

নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আশ্রয় নেন। এ সময় আবদুল হক ঢাকার স্বরূপকাঠি আওয়ামী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। ব্যবসা থেকে আয়ের একটি অংশ দলের নেতা-কর্মী ও এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করেন। ২০১১ সালে আবদুল হক উপজেলার সুটিয়াকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আবদুল হক আওয়ামী লীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসনের তৎকালীন সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল তাঁর বিরুদ্ধে শামীম হাসান নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। দলীয় সাংসদের বিরোধিতার কারণে তিনি ওই নির্বাচনে হেরে যান।

আবদুল হক বলেন, ‘২০১৪ সালে আমাকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছিল। মানুষ সেই হারের প্রতিশোধের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছেন। এ ছাড়া এলাকায় আমার ব্যক্তিগত অর্থে নানামুখী উন্নয়নের কারণে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন।’

উপজেলার সুটিয়াকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক বলেন, দলীয় প্রার্থী মুইদুল ইসলামের প্রতি দলের একটি অংশের ক্ষোভ রয়েছে। দলের একাংশের বিরোধিতা ও সাধারণ ভোটারদের তাঁর প্রতি অনীহার কারণে মুইদুল ইসলাম হেরেছেন। অন্যদিকে আবদুল হক সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় তিনি জয়ী হয়েছেন।

তবে মুইদুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।