এক যুগ পর উচ্ছেদ 'ট্রাক লেন'

উচ্ছেদ করা হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ‘ট্রাক লেন’। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরের চণ্ডীপুল এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
উচ্ছেদ করা হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ‘ট্রাক লেন’। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরের চণ্ডীপুল এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

পাশাপাশি দুটি সাইনবোর্ড। একটিতে ‘ট্রাক পার্কিং লেন’ লেখা। অপর সাইনবোর্ডে অনেকটা নির্দেশনার মতো লেখা ‘অপেক্ষমাণ ট্রাক, লাইনে দাঁড়াবে’। সিলেট নগরের প্রবেশমুখ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চণ্ডীপুর এলাকায় এই ট্রাক পার্কিং লেন পুরোপুরি অবৈধ। গতকাল মঙ্গলবার মহানগর পুলিশকে নিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তা উচ্ছেদ করেন।

উচ্ছেদকালে মেয়রের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মী, সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ, অতিরিক্ত উপকমিশনার নিকুলিন চাকমা, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব নুর আজিজুর রহমান, দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবরসহ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট, বিআরটিএ প্রতিনিধি, ট্রাক মালিক গ্রুপ ও ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নসহ পরিবহন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নগরের প্রবেশমুখ এলাকাসহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায় পক্ষকাল আগে ওই এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ট্রাকস্ট্যান্ডে ট্রাক রাখার স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর এই অবৈধ ট্রাক লেন উচ্ছেদ করা হলো।

গতকালের অভিযানকালে প্রথমে ওই অবৈধ সাইনবোর্ড দুটি অপসারণ করা হয়। এরপর মহাসড়কের এক পাশে পাকা লেন যন্ত্র দিয়ে অপসারণ করা হয়। এ সময় মহাসড়কের পাশের সহস্রাধিক মানুষ জড়ো হয়ে সিটি করপোরেশন ও নগর পুলিশের এই উদ্যোগকে অভিনন্দিত করেন। আশপাশ এলাকার বাসিন্দা ও পরিবহন সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল থেকে মহাসড়কের এই এলাকায় ট্রাক লেন স্থাপন করে ট্রাক রাখা হয়েছিল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল এখানে এসে দুর্ঘটনার শঙ্কার মধ্যে পড়ত। কিন্তু লেনে থাকা ট্রাকগুলো স্থানান্তর করার কোনো জায়গা না থাকায় এভাবেই পড়েছিল। প্রায় এক দশক পর এটি অপসারণ হলো।

অভিযান চলাকালে মেয়র আরিফুল বলেন, এই ট্রাক লেন উচ্ছেদের আগে পারাইরচকে স্থাপিত ট্রাক টার্মিনালে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ ভ্যান রাখার স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশনসহ আশপাশ এলাকায় একটি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ শেষে পরিবহন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে সরাসরি মাঠপর্যায়ে গিয়ে অবৈধ স্ট্যান্ডসহ ট্রাকের যত্রতত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর ট্রাক টার্মিনালে ব্যবহার শুরু করা হয়েছিল। দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন কাজ শেষ হওয়ার পর শুধু ট্রাক নয়, কোনো ধরনের যানবাহন যত্রতত্র রাখা বা চলাচল করতে দেওয়া হবে না।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত অবৈধ ট্রাক লেন অপসারণ অভিযান শেষে মেয়র প্রথম আলোকে বলেন, নগরে যানজট ও জনদুর্ভোগের অন্যতম একটি কারণ হলো এই অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ডগুলো। জনদুর্ভোগ কমাতে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড অপসারণে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। সব অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে অভিযান হবে

সিলেট নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে দ্রুত অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল নগর ভবনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সহনশীল নগর’ বিষয়ক এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মেয়র বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ওয়ার্ডভিত্তিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সিলেট সিটি করপোরেশন একটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে দুর্যোগের আগে ও পরের করণীয় সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী সভা সঞ্চালনা করেন। সভায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টিঅ্যান্ডটি, কেব্‌ল অপারেটর, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের বিষয় গুরুত্ব দিয়ে সিলেট নগরের রাস্তা প্রশস্তকরণ, বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাসের লাইন, সিলিন্ডার, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, মার্কেট, বিপণিবিতান ও ক্লিনিকে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে বক্তব্য দেন সভায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে নগরে একটি পানির সংরক্ষণাগার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। সেটি স্থাপিত হলে এক লাখ লিটার পানি সংরক্ষণে রাখা যাবে।